ক্রাইম প্রতিবেদক: চোরাচালান, ছিনতাই ও রাহাজানী সহ সকল অপকর্মের মূল হোতা সিলেটের গোয়াইনঘাটের আবুল কাশেম সিন্ডিকেট। আবুল কাশেম সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। এ পরিচয়কে পুঁজি করে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন অবাধে চোরাচালানে চাঁদাবাজিসহ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম। সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে আসা সকল চোরাচালান পণ্যের গড ফাদার এই আবুল কাশেম।
চোরাচালনসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় দিন দিন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শুরু করেছেন এই অবুল কাশেম বাহিনী।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সীমান্ত এলাকা থেকে ফ্যাসিবাদীদের দোসরেরা পালিয়ে গেলে তাদেরই স্থলাভিষিক্ত হতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের। তাদের মধ্যে অন্যতম ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের নলজুরী গ্রামের মৃত সামসুল হকের ছেলে আবুল কাশেম (৩৮)।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলেও মানতে নারাজ এই কাশেম সিন্ডকেট।
আবুল কাশেমের এসব অপকর্মের অন্যতম সহযোগী শাহেদ আহমেদ লিটন ওরফে (বাবলা) ও জাফলং শান্তিনগর এলাকার যুবদল কর্মি জয়দুল হোসেন, সাদ্দাম আহমদ, নাঈমসহ কয়েকজন। চক্রটি দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠায় ব্যবসায়ীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হামলা ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
এক ব্যবসায়ী অভিযোগ, গত বছরের ১ নভেম্বর ব্যাবসায়িক অংশীদার রুমেল ও জুবেরকে নিয়ে তিনি তামাবিলস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এসময় ফিশারী ব্যবসার লিজের ২৫ লক্ষ টাকা তাদের কাছে সাথে ছিল। এসময় সারিঘাট এলাকায় তাদের পথরোধ করে আবুল কাশেম, শাহেদ আহমেদ ও লিটন বাবলাসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী। তারা দেশীয় অস্ত্র লাঠিসোঁটা দিয়ে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় এবং সাথে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। পরে চিৎকার করলে এলাকাবাসী উদ্ধার করে তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে ভূক্তোভোগী আরও বলেন, মূলত আবুল কাশেমের এলাকায় ব্যবসা করার কারণেই তাদের সন্ত্রাসী গ্রুপের ক্ষোভ তাদের ওপর। এর আগে বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করছিল তারা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা এ হামলা চালায়।
পরবর্তীতে গত ১১ই নভেম্বর সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম ও দ্রুত বিচার আদালতে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নের অপরাধে (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ ( সংশোধন -২০১৯) এর ৪/৫ ধারায় আবুল কাশেম, সাহেদ আহমেদ লিটন বাবলাসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী সুফিয়ান আহম্মদ যা বিচারাধীন রয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির অভিযানে প্রতাপপুর বিওপির অন্তর্ভুক্ত রাধানগর এলাকা হতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ভারতীয় চোরাই পণ্যের চালান আটক করা হয়। যে চালানের বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকার ও বেশী। পরের দিন বিভিন্ন প্রিন্ট ও পোর্টাল মিডিয়ায় এই বিশাল ভারতীয় চোরাই পণ্যের নেপথ্যে যে দুইজনের নাম প্রকাশিত হয়েছিলো তার মধ্য অন্যতম ছিলেন জেলা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম ও জাফলং শান্তিনগর এলাকার যুবলীগ নেতা জয়দুল হোসেন।
এর আগে গত ২৪শে অক্টোবর ভারতীয় চোরাই চিনি পাচারের সময় জৈন্তাপুর বিওপির সদস্যদের হাতে আটক হওয়া চিনিভর্তি একটি ট্রাক ( ঢাকা মেট্রো -ট- ২৪-০৬৭৫) যার মালিক ছিলেন আবুল কাশেম।
চোরাকারবারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ই আগস্ট দেশের ঐতিহাসিক পদ পরিবর্তনের দিন নলজুরী এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠে আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জনের একটি সংবদ্ধ দল।
ওইদিন বিকেলে স্থানীয় গোপেশ শর্মার ছেলে গোপাল শর্মার বাড়ীতে হামলা চালানো এবং বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এরপর নলজুরী বাজারে গোপাল শর্মার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা করা হয় আবুল কাশেমের নেতৃত্বে। পরে ভূক্তোভোগী গোপালশর্মা ১৯শে আগস্ট গোয়াইনঘাট থানায় আবুল কাশেমকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ জনকে আসামি করে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। যাহার ডায়েরি নং– ৪৩৪।
চোরাকারবারি ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাঝেই ক্ষান্ত হননি আবুল কাশেমরা বরং তার ওপর রয়েছে নিজ এলাকায় ব্যবসায়ীর গাড়ী গতিরোধ করে মারধর, নগদ টাকা ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আবুল কশেমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয় ঢাকার বাড্ডা থানায়। যার নং ৩৬/২৫। এমন অসংখ্য মামলার আসামি হয়েও দিব্যি চোরাচালান, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন তিনি।
আর গোয়াইনঘাট উপজেলা জুড়ে মাদক চোরাকারবারিসহ বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কার্যকলাপ পরিচালনা সবই চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় পুলিশ আবুল কাশেমসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পাচ্ছে।
আবুল কাশেমের ও তার দুই সহযোগীর প্রতিহিংসার শিকার হন ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। তাকে অপহরণ করে তার উপর বর্ররচিত আক্রমণ করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে মানববন্ধন করে ৩নং পূর্ব ছাত্র ইউনিয়নসহ সাধারণ জনগণ।
নলজুরী মোকামবাড়ী এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হাসিম সুন্দই বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এদেশে অতীতেও হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা অত্র এলাকাতে কোনোদিন ছিল না। আবুল কাশেম সম্প্রতি সময়ে যে সব কর্মকাণ্ড করছে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুব বাজে ইঙ্গিত।
ইতিমধ্যে অত্র এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এলাকা তামাবিল স্থল বন্দরের অনেক ব্যবসায়ীকে সে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের মত ঘটনা ঘটছে। হরিপুরের সুফিয়ানকে তার দলবল নিয়ে নলজুরী বাজারে মারধর করে লুটপাট করলো আবার সুফিয়ানকে প্রধান আসামি করে হয়রানি মুলক মামলাও করেছে। সেই মামলায় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে আসামি দিতেও সে কুণ্ঠবোধ করে নি।
এ বিষয়ে জানতে আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এসব বিষয় অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন- আপনারা সরেজমিন খোঁজ নিয়ে সংবাদ করুন।
Leave a Reply