ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ | তদন্ত রিপোর্ট

রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
নাচোলে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২৫ উদযাপন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ ভাঙ্গুড়ায় জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ সাঁথিয়ায় ভেলাবাইচ বাতিল নিয়ে উত্তেজনা: দুই গ্রামে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২৫ জ্ঞানমূলক কিছু কথা বললেন সাংবাদিক দোয়েল । মেন্দি পাড়া হাই স্কুল মাঠে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে উঠান বৈঠক, নেতৃত্বে অধ্যাপক কামাল হোসেন পুরোনো বিএনপি নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শিমুল বিশ্বাসকে ঘিরে নির্বাচনী আলোচনা“পাবনা সোসাইটি”-এর উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অঙ্গীকার পাবনা ফরিদপুর ও সাঁথিয়ার যৌথ অভিযানে ৪০ লাখ টাকার চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস পাবনা বিটিসিএল অফিসে অনিয়ম–অবহেলা চাহিদা নেই দাবি করলেও কোটি টাকার সরকারি ব্যয়; সেবায় ভোগান্তি, পুনর্গঠনের দাবি
ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ

ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ

Manual2 Ad Code

মোঃ সুজন আহম্মেদ
পাবনা জেলা প্রতিনিধি

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার আজ চরম পর্যায়ে। দিন-রাতের পার্থক্য নেই যে কেউ চাইলে সহজেই পেয়ে যাচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও দেশি মদ। যেন হাত বাড়ালেই মাদক। এই মরণনেশায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী ও বয়স্করা। ফলে এলাকায় বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, সংঘর্ষ ও পারিবারিক কলহ। মানুষ আজ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

Manual6 Ad Code

গত এক সপ্তাহের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকা ও আশপাশের গ্রামে অন্তত ৫০টির বেশি স্থানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। বড়াল ব্রিজ মাছবাজার, ভাঙ্গুড়া সিএনজি স্ট্যান্ড, চৌবাড়িয়া দক্ষিণপাড়া, ভদ্রপাড়া, কালীবাড়ি বাজার, পালপাড়া, আদর্শ গ্রাম, সারুটিয়া রেলগেট, জগাতলা বাজার, নৌবাড়ীয়া চার রাস্তা, শরৎনগর রেলস্টেশন, কৈডাঙ্গা রেলব্রিজ, অষ্টমনিষা ঘোষপাড়া, নুরনগর বাজার, শাহনগর ইটভাটা এলাকা, দিলপাশার রেলস্টেশন বাজার, খানমরিচের করতকান্দি ও চণ্ডিপুরসহ আরও বহু স্থানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। মাদকসেবীরা টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি, ছিনতাই ও প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ছেন। বিদ্যালয়গামী কিশোররাও এখন মাদকসেবনে ঝুঁকছে। গত এক মাসেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি ছোট-বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে, যার অধিকাংশই মাদকাসক্তদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

চলনবিল অধ্যুষিত শান্ত, কৃষি প্রধান এই উপজেলা আজ মাদক ব্যবসার এক ভয়ংকর ঘাঁটিতে পরিণত হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন তরুণ এতে জড়িয়ে পড়ছে। পরিবার ভাঙছে, সমাজ অশান্ত হচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর উদ্যোগ ও সামাজিক সচেতনতা না বাড়লে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা আরও বাড়বে এমন আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক ব্যবসার মূল হোতারা রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও অর্থবান। তারা বিভিন্ন মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে তৈরি করেছেন একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। উপজেলায় অন্তত ১৫ জন বড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলে অধিকাংশ কারবার।

বড়াল ব্রিজ স্টেশনের এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাত নামলেই এখানে মাদক কেনাবেচা শুরু হয়। পুলিশ অনেক সময় পাশ দিয়ে গেলেও তারা কিছু বলে না। অনেক সময় দেখা যায়, মাদক ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই খবর পায় কোথায় অভিযান হবে।

Manual3 Ad Code

কালিবাড়ি বাজারের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা যেমন জানি কারা এই ব্যবসা চালায়। প্রশাসনও জানে। কিন্তু বড় লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। ছোটখাটো বিক্রেতাদের ধরেই দেখানো অভিযান চালানো হয়। অনেক সময় দেখি মাদক কারবারিদের সঙ্গে পুলিশের কিছু সদস্য ঘনিষ্ঠভাবে চলাফেরা করে।

Manual8 Ad Code

বেতুয়ান এলাকার এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে আগে ভালো ছাত্র ছিল। এখন তার চোখ লাল, ঘুমায় না, টাকা চায় সবসময়। বুঝতে পারলাম ইয়াবা খাওয়া শুরু করেছে। স্কুলে যেতেও চায় না। এই মাদক যদি সহজেই হাতে না পেত তাহলে হয়তো আমার ছেলেটা নষ্ট হতো না।

শরৎনগর বাজারের দোকানি আব্দুল জব্বার বলেন, পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান চালায় ঠিকই, কিন্তু সেসব আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে ছোটখাটো বিক্রেতা ধরা পড়ে, কিন্তু যারা আসল নিয়ন্ত্রক, তারা অক্ষত থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন অসাধু পুলিশ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত ‘মাসোহারা’ নেয়। ফলে অভিযান চালালেও মূল হোতারা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব লিখন সরকার বলেন, পুলিশের উদাসীনতার কারণেই ভাঙ্গুড়াতে এই মাদকের ভয়াবহতা বেড়েছে। বেড়েছে বিভিন্ন অপরাধ। চলতি মাসে চড়-ভাঙ্গুড়াতে এক মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকসহ ধরে পুলিশের সপর্দ করে উপজেলা ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা। মাদকের ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রদল পূর্বেও কঠোর ছিল ভবিষ্যতেও কঠোর থাকবে। তবে থানা পুলিশকে তাদের উদাসীনতার মনোভাব দূর করতে হবে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আখিরুজ্জামান মাসুম বলেন, হঠাৎ করেই ভাঙ্গুড়াতে মাদকের ভয়াবহতা বাড়ছে এটা আমরা লক্ষ্য করেছি। এ বিষয়ে মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিং এ একাধিকবার প্রশাসনকে বলা হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। কারা মাদক ব্যবসা করছে এটা অনেকের মত পুলিশ ও জানে তবুও তাদের উদাসীনতার কারণে ভাঙ্গুড়া আজ মাদকের স্বর্গরাজ্য পরিণত হচ্ছে। মাদক শুধু ব্যক্তিকে ধ্বংস করে না, পুরো সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভাঙ্গুড়া আর নিরাপদ থাকবে না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আকতার বলেন, “মাদকের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় নেই। পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে এবং আমরা মাদক নির্মূলে সম্পূর্ণভাবে বদ্ধপরিকর। বড় হোক বা ছোট যেই মাদক ব্যবসায়ী হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশের কিছু সদস্য অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “পুলিশের কারও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবুও যদি এমন অভিযোগ থেকে থাকে, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Manual7 Ad Code

তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এত অভিযান চলার পরও যদি মাদক আরও ছড়িয়ে পড়ে, তবে সেই অভিযান কতটা কার্যকর?ছবি: ভাঙ্গুড়ার একাধিক স্থানে ও খোলা জায়গায় চলছে মাদক সেবন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code
error: Content is protected !!