সন্তানদের জন্য ত্যাগী ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল বাবা | তদন্ত রিপোর্ট

রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
নযথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো নাচোলের রাণী ইলা মিত্রের জন্মশত বার্ষিকী এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল উপলক্ষে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের দুই নেতার শুভেচ্ছা ও প্রেরণার বার্তা “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বড়াইগ্রামে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ” নোঙর সভাপতি অধ্যাপক হাসানুজ্জামান এর ৫৯ তম জন্মদিন পালন করলো উত্তরণ পাবনা  বড়াইগ্রামে জামায়াতে ইসলামী’র বিশাল জনসভা শুক্রবার — জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে প্রস্তুত প্রশাসন পুঠিয়ার শিলমারিয়ায় সনাতনী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের নারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ভাঙ্গুড়ায় আড়াই লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জাল পুড়িয়ে ধ্বংস সিলেটে আ.লীগ নেতা বালু আপ্তাব পুলিশের জালে বাগমারা গণিপুরে অধ্যাপক কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩১ দফা গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ নাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০, থমথমে পরিস্থিতি এলাকায়।
সন্তানদের জন্য ত্যাগী ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল বাবা

সন্তানদের জন্য ত্যাগী ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল বাবা

Oplus_131072

Manual6 Ad Code

এম এ মান্নান, নিয়ামতপুর নওগাঁ: সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের জীবন কাহিনী অন্যদের জন্য প্রেরণার বাতিঘর হয়ে দাঁড়ায়। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ঘোলকুড়ী গ্রামের সন্তান আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমান মোল্লা তাঁদেরই একজন। তিনি হয়তো উচ্চশিক্ষিত নন, বড় কোনো সরকারি চাকরিও করেননি, কিংবা রাজনীতি বা খ্যাতির আলোয় আলোকিত হননি; তবুও তিনি তাঁর জীবনের সংগ্রাম, ধৈর্য, শ্রম ও সন্তানদের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা দিয়ে প্রমাণ করেছেন—একজন বাবা পরিবারকে কেমন করে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারেন। শৈশবকালেই তিনি সাংসারিক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। সংসারের টানাপোড়েন তাঁকে বেশি পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়নি। অনেকেই হয়তো এখানেই হাল ছেড়ে দিতেন, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। পড়াশোনার পরিবর্তে তিনি মনোযোগী হয়ে ওঠেন ফুটবল খেলায়। বিশেষ করে গোলরক্ষক হিসেবে তাঁর দক্ষতা আশপাশের এলাকায় পরিচিতি এনে দেয়।

Manual5 Ad Code

তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত ফুটবল প্রেমিক। ফুটবল তখনও গ্রামীণ জীবনে অন্যতম বিনোদন, এবং তিনি সেই খেলায় মানুষের প্রশংসা অর্জন করেন। তবে খেলাধুলার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে জীবনের প্রারম্ভে সংসারের প্রতি তাঁর মনোযোগ কিছুটা কম ছিল।বিয়ের পর থেকেই তাঁর জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পর তিনি ধীরে ধীরে পরিবারকে ঘিরে পরিশ্রমী হয়ে ওঠেন। তিনি দর্জি পেশাকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। একই সঙ্গে নিজস্ব চাষযোগ্য জমিতে কৃষিকাজও চালিয়ে যান।তিনি বুঝেছিলেন, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা হয়তো একদিন আসবে, আবার চলে যাবে। কিন্তু সন্তানদের শিক্ষার আলো যদি তাদের জীবনে জ্বালানো যায়, তবে সেই আলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আলোকিত করে যাবে। তাই তিনি নিজের সীমিত আয়ে থেকেও সন্তানদের শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন।

Manual1 Ad Code

আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমান মোল্লার চার সন্তান—তিন ছেলে ও এক মেয়ে। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর দ্বিতীয় ছেলে মোঃ মাহাবুর রহমান অকালেই মৃত্যুবরণ করেন, যা একজন বাবার জন্য ভীষণ কষ্টের বিষয়। কিন্তু তিনি দুঃখকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বাকি সন্তানদের গড়ে তোলার জন্য আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন।বড় ছেলে মোঃ আব্দুল মান্নান গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বর্তমানে শ্রীমন্তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল বিভাগে ইন্সট্রাক্টর (ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন) পদে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে ড. মোঃ মাহতাব আলী মোল্লা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে রসায়নের প্রভাষক পদে কর্মরত।একমাত্র মেয়ে মোসাঃ জেসমিন আরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।বর্তমানে মোসাঃ জেসমিন আরা খাঁ-পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পত্নীতলা নওগাঁ সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত আছেন। তিনি হয়তো নিজে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি, কিন্তু সন্তানদের সবার মধ্যে তিনি শিক্ষার স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে—শিক্ষার প্রতি আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ থাকলে আর্থিক টানাপোড়েন কোনো বাধাই নয়।গ্রামের সাধারণ মানুষ এখনো তাঁর কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে বলেন। আশেপাশের মানুষ জানেন—একজন বাবা কীভাবে নিজের সীমিত চাষযোগ্য জমি, দর্জির সামান্য আয়ে সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারেন। শুধু সংসার চালানোই নয়, তিনি ধীরে ধীরে নতুন জমিও ক্রয় করেছেন। যা প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক পরিকল্পনা জীবনকে কিভাবে এগিয়ে নিতে পারে।তিনি সমাজের তরুণদের জন্যও অনুপ্রেরণা। অনেক তরুণ যখন সামান্য সমস্যায় ভেঙে পড়ে, তখন তাঁর জীবনের গল্প বলে দেয়—চেষ্টা থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।আজ তিনি সুস্থ আছেন। তাঁর চোখে-মুখে তৃপ্তির ছাপ। কারণ তিনি জানেন, জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো সন্তানদের মানুষ করে তোলা। তাঁর প্রতিটি অর্জন যেন সন্তানদের জীবনে প্রতিফলিত হয়েছে।আমাদের সমাজে বাবাকে বলা হয় “বটবৃক্ষ”। যে নিজের ছায়া দিয়ে সন্তানদের রোদ থেকে রক্ষা করে, নিজের কষ্ট আড়াল করে সন্তানদের সুখী রাখে। আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমান মোল্লা সেই বটবৃক্ষেরই প্রতীক।আলহাজ্ব মোঃ জিল্লুর রহমান মোল্লার জীবনকাহিনী শুধু তাঁর পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ।

তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন সীমিত শিক্ষায়ও একজন বাবা প্রজ্ঞা, পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে সন্তানদের সফল করে তুলতে পারেন।আমাদের একান্ত প্রার্থনা, তিনি যেন দীর্ঘায়ু হন, সুস্থ থাকেন এবং পরিবারের জন্য ছায়া হয়ে থাকেন। ইনশাআল্লাহ, তাঁর জীবন সবার জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

Manual1 Ad Code

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code
error: Content is protected !!