গোয়াইনঘাট সংবাদদাতা: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ঘিরে চলছে নানা অনিয়ম। ব্ল্যাক টিকেট বাণিজ্যের কারণে বছরে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাতারগুল বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশের জন্য টিকেট কাউন্টারে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়। কাউন্টারে লাইন ধরে টিকেট ক্রয় করছেন রাতারগুলে বেড়াতে আসা আগত পর্যটকরা। কাউন্টারের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দেখা গেলো অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার চিত্র। নেই বন বিভাগেরও কেউ। কাউন্টারের দায়িত্বরত স্থানীয় মামুন নামে এক ব্যক্তিকে টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাতে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত টিকেট সকল পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছেন। টিকেট ক্রয় করা উপস্থিত পর্যটকদের কাছে ছাত্র-ছাত্রী পরিচয়ধারী কিনা জানতে চাইলে তারা পরিচয়পত্র দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে।
এরপর নৌকাঘাটে গিয়ে আরেক দফায় পর্যটকদের কাছে টিকেট দেখতে চাইলে তারা গণমাধ্যমে বলে, তাদের টিকেট নৌকার মাঝির কাছে। এ সময় সাথে সাথে মাঝি তার পকেটে থাকা পর্যটকদের টিকেট সাংবাদিকদের হাতে দেন। তাতে দেখা যায় ওই টিকেটগুলোও ছাত্রছাত্রী পরিচয়ধারীদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু নৌকায় থাকা পর্যটকরা কেউই ছাত্র-ছাত্রী নন বলে জানান। এতে নির্ধারিত প্রবেশ ফি না দিয়ে ব্ল্যাক টিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এতেকরে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নৌকার মাঝিরা গণমাধ্যমে জানান, রাতারগুলে নৌকা দিয়ে ভ্রমণের সময় পর্যটকের টিকেটগুলো তাদের কাছে রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। পরে বিক্রিত টিকেটগুলো মাঝিদের কাছ থেকে কতিপয় লোকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে টিকেট কাউন্টারে নেওয়া হয় এবং পরে সংগৃহীত এসব টিকেট পুনরায় বিক্রয় করা হয়। এতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন লোক।
পরে আরেকটি নৌকাঘাটের নৌকায় থাকা আটজন পর্যটকের টিকেট দেখতে চাইলে নৌকার মাঝি পাঁচজন পর্যটকের টিকেট তার পকেট থেকে বের করে দেখান। কিন্তু নৌকায় থাকা আট পর্যটকদের মধ্যে বাকি তিনজন পর্যটকের টিকেট দেখাতে পারেন নি মাঝি।
এদিকে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয় গোয়াইনঘাটের এই পর্যটনকেন্দ্র।
এ ব্যাপারে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট সহ-ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম অনিয়মের দায় স্বীকার করে গণমাধ্যমে বলেন, কিছু ভুল ত্রুটি রয়েছে। আমরা মিটিং ডেকে কড়াকড়ি আরোপ করবো।
বন বিভাগের সারি রেঞ্জের কর্মকর্তা বিপ্লব গণমাধ্যমে বলেন, রাতারগুল বন বিভাগের অনিয়মের ব্যাপারে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কেউ যদি অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী গণমাধ্যমে বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার মাধ্যমে অভিযোগটি জানতে পারলাম। কেউ যদি অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবো। তিনি বলেন, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য আমি নিজেই প্রবেশ ফি ও নৌকা ভাড়া দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি।
Leave a Reply