হাতবদলে জমজমাট ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজিতে টোকেন বাণিজ্য, নেপথ্যে যারা! | তদন্ত রিপোর্ট

শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
ভাঙ্গুড়ায় জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ সাঁথিয়ায় ভেলাবাইচ বাতিল নিয়ে উত্তেজনা: দুই গ্রামে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২৫ জ্ঞানমূলক কিছু কথা বললেন সাংবাদিক দোয়েল । মেন্দি পাড়া হাই স্কুল মাঠে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে উঠান বৈঠক, নেতৃত্বে অধ্যাপক কামাল হোসেন পুরোনো বিএনপি নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শিমুল বিশ্বাসকে ঘিরে নির্বাচনী আলোচনা“পাবনা সোসাইটি”-এর উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অঙ্গীকার পাবনা ফরিদপুর ও সাঁথিয়ার যৌথ অভিযানে ৪০ লাখ টাকার চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস পাবনা বিটিসিএল অফিসে অনিয়ম–অবহেলা চাহিদা নেই দাবি করলেও কোটি টাকার সরকারি ব্যয়; সেবায় ভোগান্তি, পুনর্গঠনের দাবি পুকুরের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি, আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের মানুষ রৌমারীতে জামালপুর ব্যাটালিয়নের (৩৫ বিজিবি) অভিযানে আসামীবিহীন ভারতীয় মদ-১৬ বোতল আটক।
হাতবদলে জমজমাট ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজিতে টোকেন বাণিজ্য, নেপথ্যে যারা!

হাতবদলে জমজমাট ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজিতে টোকেন বাণিজ্য, নেপথ্যে যারা!

★ রাজস্ব বঞ্চিত সরকার ও ঘটছে দূর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি
★ রাজস্ব বঞ্চিত সরকার ও ঘটছে দূর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি

Manual7 Ad Code

তদন্ত রিপোর্ট প্রতিবেদক:
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে দেদারছে চলছে নাম্বার বিহীন টোকন চালিত ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজি, সিএনজি চালিত ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও টমটম। আবার শিশু চালক দিয়ে চলছে লক্ষর ঝকর লেগুনাসহ পিকআপ। যখন তখন ঘটছে দূর্ঘটনা আর হচ্ছে প্রাণহানি। সংশ্লিষ্ট সড়ক প্রশাসন নিরব ফলে দেখার যেনও কেউ নেই।

বিগত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে টোকেন সিন্ডিকেটের বাণিজ্যে ভাটা পড়ে। তবে কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে আগের অবস্থায়। ফলসরূপ তামাবিল মহাসড়কে হাতবদলে ফের জমজমাট ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজিতে টোকেন বাণিজ্য। এ সড়কে টোকেন বাণিজ্যের পুরোনো কৌশল পাল্টেছে পুলিশও। আগের পন্থার চেয়ে নতুন পন্থা বেশ অভিনব। আরও নিরাপদ।

আগের সরবরাহ করা টোকেন সিএনজি অটোরিকশার গায়ে লাগানো হলেও এখন আর তা করতে হয় না। স্টিকারের মতো চালকের মোবাইল ফোনের পেছনে লাগিয়ে দেওয়া হয়। টহল পুলিশ বা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালে মোবাইল বের করে পেছন সাইট দেখালেই দ্রুত চলার সিগন্যাল মিলে। না হলে আটকে দেওয়া হয়। তবে কৌশলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোবাইল স্টিকার’! এটি এখন সিলেটের তামাবিল মহাসড়কে রমরমা। সিলেট জেলা পুলিশ-এসএমপির ট্রাফিক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছেন এর নেতৃত্বে। মাঠপর্যায়ে আগে একটি চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট এসব নিয়ন্ত্রণ করলেও সরকার পরিবর্তনে ফলে শুধু হাতবদল হয়েছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের।

Manual4 Ad Code

শুধু তাই নয় তামাবিল মহাসড়কে ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজিতে অবাধে টোকেন বাণিজ্যে চালাতে সদরের শাহপরান থানা, গোলাপগঞ্জ থানা, কানাইঘাট থানা, জৈন্তাপুর থানা ও গোয়াইনঘাট থানা নিয়ে ঘটিত হয়েছে ৫ থানার নামে একটি কমিটি। এ কমিটির নাম সিএনজি শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এখন এই নতুন কমিটির চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নেতারা নেপথ্যে থেকে তাদের কমিটির সদস্যের মারফতে টোকেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন এই ৫ থানার ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজিতে টোকেন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন এই কমিটির নামে।

সরেজমিন অনুসন্ধান নামে টিম। উটে আসে সিলেটের তামাবিল মহাসড়ক সাকিনস্থ এই ৫ থানা নিয়ে গঠিত সিএনজি শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নামের এই কমিটি মারফতে টোকেন বাণিজ্যে জড়িত চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের কয়েক জনের নাম। তারা হচ্ছেন- জৈন্তাপুর থানাধীন দরবস্ত ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং চট্ট-৭০৭ এর অন্তর্ভুক্ত হরিপুর বাজার উপ-কমিটির সভাপতি ও ৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সভাপতি চাঁদাবাজ আব্দুল কুদ্দুস উরফে টোকেন কুদ্দুস, পিরের বাজার উপ-কমিটির সভাপতি, সিলেট মহানগর সিএনজি শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি ও ৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পিরের বাজার (হাতুড়া) উপ-কমিটির সহ-সভাপতি ও ৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সদস্য মোঃ নাজিম উদ্দিন, কানাইঘাট থানাধীন গাছবাড়ি বাজার উপ-কমিটির সহ-সভাপতি মাসুক ওরফে টোকেন মাসুক নেপথ্যে থেকে তাদের সিন্ডিকেটের অপরাপর সদস্যদের মারফতে নিয়ন্ত্রণ করছেন তামাবিল মহাসড়কে ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজিতে টোকেন বাণিজ্য।

Manual8 Ad Code

এদিকে তাদের অপরাপর সদস্যরা হচ্ছেন- শাহপান থানাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং-৭০৭ এর অন্তর্ভুক্ত মুরাদপুর বাজার উপ-কমিটির সভাপতি জেবুল ওরফে টোকেন জেবুল, জৈন্তাপুর থানাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং-৭০৭ এর অন্তর্ভুক্ত দরবস্ত বাজার উপ-কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শামীম, গোলাপগঞ্জ থানাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং-৭০৭ এর অন্তর্ভুক্ত বাঘা সোনাপুর উপ-কমিটির সভাপতি ও ৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক দারা, গোয়াইনঘাট থানাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং-৭০৭ এর অন্তর্ভুক্ত বাইপাস উপ-কমিটির সভাপতি ও ৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন, কানাইঘাট থানাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং-৭০৭ এর অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ বাজার উপ-কমিটির সভাপতি হাদে, কানাইঘাট উত্তর বাজার উপ-কমিটির সভাপতি ও ৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক কাউসার এবং উত্তর বাজার উপ-কমিটির সদস্য কতিপয় আ.লীগ নেতা আমিনসহ গাছবাড়ি বাজার উপ-কমিটির সাবেক সভাপতি মঈনুল মিয়া।

জানা গেছে- এই ৫ থানার সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার ও ‘রোহিঙ্গা’ সিএনজির সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশী। আর অবৈধ গাড়িগুলো এখন চলছে নতুন সিন্ডিকেটের বিশেষ টোকেন’র মাধ্যমে। টোকেন বাণিজ্য করে মাসে লাখ লাখ ও বছরে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে এ টোকেন সিন্ডিকেট। অবৈধ এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে সাহস যেনও নেই প্রশাসনের। এদিকে এ টোকেন সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রকের গুরু দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি নেতা লুৎফুর। এখন তা্র ইশারায় তামাবিল সড়কে চলছে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা।

Manual4 Ad Code

পরিচিতি শুধু টোকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সড়কের একাধিক চালক জানান, এ সড়কে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশাকে চলাচলের সুযোগ করে দিতে যখন পুলিশ অবৈধভাবে টোকেন বাণিজ্যে নামে, তখন গাড়িপ্রতি মাসে ৩০০ টাকায় একটি টোকেন বিক্রি করা হতো। পরে সেটি ৬০০ টাকায় নেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পর সিন্ডিকেটের হাদবদল হলে টোকেনের দাম চলে যায় গাড়িপ্রতি ১০০০ টাকায়। গত মাস থেকে নতুন কৌশলে স্টিকার চালু হওয়ার পর প্রতি মাসের জন্য এটি কিনতে হচ্ছে ১৩০০ টাকা করে। শো-রুম থেকে কেনা নতুন অটোরিকশা ছাড়াও চোরাই গাড়ি চলছে এই টোকেন দিয়ে।

এ সড়কে এমন গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। এরজন্য প্রতি মাসে এ সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ১৩০০ টাকা করে। মাসের ৫-১০ তারিখের মধ্যে এই টাকা দিয়ে এ সিন্ডিকেটের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের কাছ থেকে কিনতে হয় স্টিকার। ট্রাফিক পুলিশ নিজে কখনো তা বিক্রি করেন না বা দেনও না। এই সিন্ডিকেটের লুৎফুর, কুদ্দুস, নেছার, নাজিম ও মাসুক তারা তাদের অপরাপর সদস্যদের মারফতে চালকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এর মাধ্যমে মাসে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে পুলিশের টোকেন সিন্ডিকেট। এর একটি অংশ এ সিন্ডিকেটের মূলহোতা ৫ জনের পকেটে গেলেও বড় অংশ যায় সিলেট জেলা ও এসএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে সহ ভাগ দেওয়া ৫ থানার ওসি থেকে কনেস্টবলকেও।

সূত্রমতে- পুলিশের অবৈধ স্টিকার চালু করায় সিলেট এখন হয়ে উঠেছে চোরাই গাড়ির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আর এর জংশন হয়ে উঠেছে সিলেট তামাবিল মহাসড়কের ৫ থানা এলাকার সড়কগুলো। সেখানে অন্য জেলা থেকে চোরাই গাড়ি এনে বিক্রি করা হয়। সিএনজি অটোরিকশা পরিবহন সেক্টরে এগুলোকে ‘রোহিঙ্গা গাড়ি’ নামে ডাকা হয়। রোহিঙ্গা গাড়ি দামে সস্তা বিধায় লাখ খানেক টাকায় কেনা যায় এসব গাড়ি।

দরবস্ত ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক লুৎফুরের ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- এসব মিথ্যা, আমাকে নিয়ে কোন চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে আমার অফিসে ৫ থানা নিয়ে গঠিত সিএনজি শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কয়েকজন নেতা আসা-যাওয়া করেন দেখে হয়তো কেউ এরকম প্রোপাগান্ডা রটাচ্ছে।

৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস উরফে টোকেন কুদ্দুসের ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- এসব ভুয়া তবে তিনি আওয়ামী লীগের আমলে এসব নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।

Manual7 Ad Code

সিলেট মহানগর সিএনজি শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি ও ৫ থানা নিয়ে গঠিত সমন্বয়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদের ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- তিনি মধ্যখানে ছিলেন তবে এখন এসবে তিনি জড়িত নয় আর এ বিষয়ে আপাততঃ তিনি কিছুই জানেন না।

অপরদুজন নাজিম ও মাসুকের সেলফোনে যোগাযোগ করলে তারা উভয়ে ফোনকল রিসিভ না করায় বক্তব্য মিলেনি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code
error: Content is protected !!