খাদিমপাড়ায় নিম্নমানের খোয়া ও রাবিশে চলছে রাস্তার কাজ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ! শিরোনামে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের টেলিভিশনসহ জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসেন এলজিইডি সিলেট সদর উপজেলার প্রকৌশলী মোঃ হাসানুজ্জামান। তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সরজমিন পরিদর্শনকালে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পান। ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পীরের চক গ্রামের পাকা রাস্তায় পুরোনো ভবনের রাবিশ ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে নির্মাণকাজের সত্যতা পেয়ে তাদের উপস্থিতিতে ব্যবহৃত নিম্নমানের খোয়া ও রাবিশ গুলো তুলা হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ রাস্তায় ব্যবহৃত নিম্নমানের এসকল খোয়া ও রাবিশ সরিয়ে নেওয়ার জন্য তারা নির্দেশ প্রদান করলেও বাস্তবে করেনি এম.এস বিল্ডার্স নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
উল্টো ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার শাহানুর রহমান সামাদ নিজেকে সিলেট জেলা যুবদলের বর্তমান কমিটির যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক পরিচয়ে দফায় দফায় বিভিন্ন লোক মারফতে সাংবাদিকদের ম্যানেজের চেষ্টা চালান কিন্তু তাতে ব্যর্থ হন প্রতিবারই। এতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। বিভিন্ন লোক মারফতে সাংবাদিকদের হত্যা, গুমসহ খুনের হুমকিও দেওয়াতে থাকেন অনবরত যা এখনও চলমান। এতেও যখন কাজ হয়নি তখন তিনি সিলেটের স্থানীয় একটি পত্রিকা অফিসে গিয়ে ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করানোর অপ্রচেষ্টাও চালান। কিন্তু যখন ওই পত্রিকা অফিস সাংবাদিকদের নাম শুনে তখন তারা জানায় যায় যে এরা সিলেটের মূলধারার সাংবাদিক তাদের বিরুদ্ধে এইরকম অহেতুক ল সংবাদ প্রকাশ করা আমরা কিংবা সিলেটের কোন সাংবাদিকও এরকম কাজ করবে না বলে জানানো হয়। তখন তিনি নিরুপায় হয়ে এ অফিস ত্যাগ করেন।
এ বিষয়টি পরবর্তীতে ওই পত্রিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেলফোন মারফতে ওই সাংবাদিকদের জানান, যার ফোন রেকর্ড তাদের নিকট সংগ্রহকৃত রয়েছে। মূলত ঠিকাদার সামাদ নিজের অপকর্ম আড়াল করতে না পেরে এবং টাকার বিনিময়ে ওই সাংবাদিকদের ম্যানেজ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে উল্টো বিভিন্ন রকমের প্রন্থা অবলম্বন করছেন যাতে ওই সাংবাদিকরা পরবর্তীতে তিনি ওই রাস্তায় যেমন ইচ্ছে তেমন কাজ করলেও তার কোন অপকর্ম কিংবা কাজের অনিয়ম নিয়ে যাতে তারা কোন রকম লেখালেখি না করেন।
উল্লেখ্য, নিম্নমানের খোয়া ও পুরোনো রাবিশে ধুমধামে প্রায় শেষের দিকে রাস্তার কাজ। সিলেট সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পীরের চক গ্রামের পাকা রাস্তায় পুরোনো ভবনের রাবিশ ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে নির্মাণকাজ হয়েছে ধুম-ধাড়াক্কা। ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ১ হাজার ৫৩৮ কিলোমিটার পাকা রাস্তার নির্মাণকাজে হয়েছে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা স্থানীয়দের জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলেও তাতে কর্ণপাত হয়নি কর্তৃপক্ষের। এলজিইডির অর্থায়নে আইআরআইডিপি-৩ প্রকল্পের রাস্তাটি সম্প্রসারণ ও সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয় এম.এস বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। উল্লিখিত ১ নম্বর নতুন ইটের খোয়ারস্থলে পুরোনো ভবনের নিম্নমানের রাবিশ ও খোয়া রাস্তার নির্মাণকাজে ব্যবহার করে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সহস্রাধিক মানুষের চলাচলের জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি নির্মাণে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে জেলা ও উপজেলা এলজিইডিসহ ইউপি সদস্যগণ নিশ্চুপ।
অভিযোগ আছে, এলজিইডি সিলেট সদর উপজেলার প্রকৌশলী মোঃ হাসানুজ্জামান ও ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মছব্বিরের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদার সামাদ রাস্তাটির নির্মাণকাজে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নিম্নমানের খোয়া ও রাবিশে হয়েছে এ যেন দায়সাড়া কাজ। শুধু তাই নয়, রাস্তার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের বালুও। ইতিমধ্যে নিম্নমানের খোয়া ও রাবিশ বালুর সঙ্গে মিশিয়ে রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় সাব-ব্যাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার সামাদ রাস্তার কাজে প্রচুর অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তায় নতুন ইটের পরিবর্তে পুরোনো ইট দিয়ে এজিং করছেন। কৌশলে রাতের আঁধারে আশপাশের বিভিন্ন স্থানের পরিত্যক্ত পুরোনো ভবনের ইট ও রিজেক্ট রাবিশ অল্প দামে কিনে এনে নির্মাণ কাজ এখনও চালাচ্ছেন। এই খোয়া ও রাবিশ দিয়ে কাজ পরিপূর্ণ হলে রাস্তাটি তিন মাসও টিকবে না বলে শংকা স্থানীয়দের।
Leave a Reply