গোয়াইনঘাটে জুড়ে কাশেম-বাবলা'র রামরাজত্ব | তদন্ত রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
মোহনগঞ্জ বাজারের সুইচগেট মোড়ে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা—দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি এলাকাবাসীর সিলেটে ১৩ কোটি টাকার বালু ৩৮ লাখে বিক্রি জাফলং এএসআই রেজওয়ানকে ম্যানেজ করে বালু-পাথর হরিলুট রৌমারীতে লকডাউন বিরোধী কর্মকাণ্ডে তিনজন গ্রেফতার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে গান পাউডার ও ককটেল তৈরীর সরঞ্জামাদি সহ আটক ১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ (নাচোল-গোমস্তাপুর- ভোলাহাট) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেলেন আমিনুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে নবীন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন অনুষ্ঠিত নাচোলে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২৫ উদযাপন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ ভাঙ্গুড়ায় জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ
গোয়াইনঘাটে জুড়ে কাশেম-বাবলা’র রামরাজত্ব

গোয়াইনঘাটে জুড়ে কাশেম-বাবলা’র রামরাজত্ব

Manual8 Ad Code

তদন্ত রিপোর্ট ডেস্ক: গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকার নলজুড়ী, আমস্বপ্ন, খাসিয়া হাওর, তামাবিল, সোনাটিলা, গুচ্ছগ্রামসহ আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ কাশেম-বাবলা চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা প্রতারণার মাধ্যমে “সিলেট জেলা বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় একজন নেতার নাম ব্যবহার করে চোরাচালান, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অনৈতিক কার্যকলাপে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।” রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে উক্ত চক্র একটি রাজনৈতিক দলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণের উপর অমানবিক জুলুম, অত্যাচার ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Manual1 Ad Code

তারা রাজনৈতিক দলের পদ-পদবী ব্যবহার করে উপরোক্ত এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, ছিনতাই, জমি-জমা দখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, পুলিশ ও বিজিবিকে সাজানো তথ্য দিয়ে নিরীহ জনগণের বাসা-বাড়ীতে অযথা তল্লাশী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র। তাছাড়া উক্ত কাশেম ও বাবলা পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাঙ্গিয়ে চোরাচালানীদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা আদায় করে যাচ্ছে। উক্ত চক্রের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইসহ রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। আর এসবের মূল হোতা আবুল কাশেম।

তিনি সিলেট জেলা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়কে পুঁজি করে চালিয়ে যাচ্ছেন অবাধে চোরাচালান, চাঁদাবাজিসহ সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম। গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে আসা সকল চোরাচালান পণ্যের গড ফাদার তিনি। ইতোমধ্যে চোরাচালনসহ বিভিন্ন অপকর্মের টাকায় গড়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় দিন দিন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।

জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার চিহ্নিত মাদক ও চোরাকারবারি আবুল কাশেম রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। আর তার এসব কাজের অন্যতম সহযোগী শাহেদ আহমেদ লিটন (বাবলা) ও জাফলং শান্তিনগর এলাকার জয়দুল হোসেন। এই চক্রটি দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ এই চক্রের হামলার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নলজুড়ীর নির্যাতিত মানুষজন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নলজুড়ী গ্রামের মো. আবুল কাশেম নলজুড়ী বাজারে একটি অফিস কক্ষ নিয়ে প্রতিদিন রাতে সেখানে মাদক সেবন সহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকেন। যুবতীদের নিয়ে থাকেন আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত। স্থানীয় মানুষদের জিম্মি করে নলজুড়ী তথা সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চলছে কাশেমের রাম রাজত্ব। কাশেম ও তার অন্যতম সহযোগী বাবলা একাধিক মামলার আসামী।

Manual6 Ad Code

স্থানীয়রা জানান, চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ী নলজুড়ী গ্রামের আব্দুল মন্নানের ছেলে শাহেদ আহমদ লিটন (বাবলা)-কে নিয়ে খাসিয়া হাওর নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন কাশেম। অপরিকল্পিতভাবে দিনে-রাতে বালু উত্তোলনের ফলে খাসিয়া নদী হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক রূপ। ধ্বংস হচ্ছে গাছপালা, রাস্তাঘাটসহ নদী তীরবর্তী স্থাপনা। শুধু তাই নয় এই চক্র স্থানীয় সরকারী বাগানও তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

পাশাপাশি নির্বিচারে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে। তাছাড়া সরকারী খাস জমি দখল করে সেখানে বিক্রির জন্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু, টিলাকাটার মাটিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। এই চোরাকারবারী চক্রের অন্যায় অবিচার আর জুলুম অত্যাচারে অতিষ্ঠ সীমান্তবর্তী মানুষজন ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেননা। তাদের অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা-হামলাসহ নানাভাবে অত্যাচার করে তাদের হয়রানি করা হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তামাবিল কাস্টমস এ কাশেম-বাবলার নেতৃত্বে ব্যাপক লুটপাঠ হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার চিহ্নিত মাদক ও চোরাকারবারি আবুল কাশেম রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। আর তার এসব কাজের অন্যতম সহযোগী শাহেদ আহমেদ লিটন (বাবলা) ও জাফলং শান্তিনগর এলাকার জয়দুল হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছে প্রায়ই ব্যবসায়ীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ এই চক্রের হামলার শিকার হচ্ছেন।

ব্যবসায়ী সুফিয়ান আহমদ জানান, বিগত ১ নভেম্বর ব্যাবসায়িক অংশীদার রুমেল ও জুবেরকে নিয়ে তামাবিলস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। এসময় ফিশারী ব্যবসার লিজের ২৫ লক্ষ টাকা আমাদের কাছে সাথে ছিল। কিন্তু সারিঘাট এলাকায় আমাদের পথরোধ করে আবুল কাশেম, শাহেদ আহমেদ ও লিটন বাবলাসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী। তারা দেশীয় অস্ত্র লাঠিসোঁটা দিয়ে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আমার বাকি দুজনের ওপর হামলা চালায় এবং সাথে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়।

পরবর্তীকে গত ১১ নভেম্বর সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম ও দ্রুত বিচার আদালতে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নের অপরাধে (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ ( সংশোধন -২০১৯) এর ৪/৫ ধারায় আবুল কাশেম, সাহেদ আহমেদ লিটন বাবলাসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী সুফিয়ান আহম্মদ যা বিচারাধীন রয়েছে। গত ৬ই নভেম্বর সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির অভিযানে প্রতাপপুর বিওপির অন্তর্ভুক্ত রাধানগর এলাকা হতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ভারতীয় চোরাই পণ্যের চালান আটক করা হয়েছিল। যে চালানের বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকার ও বেশী। পরের দিন বিভিন্ন প্রিন্ট ও পোর্টাল মিডিয়ায় এই বিশাল ভারতীয় চোরাই পণ্যের নেপথ্যে যে দুইজনের নাম প্রকাশিত হয়েছিলো তার মধ্য অন্যতম ছিলেন জেলা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম ও জাফলং শান্তিনগর এলাকার জয়দুল হোসেন।

উল্লেখ্য যে, গত ২৪ অক্টোবর ভারতীয় চোরাই চিনি পাচারের সময় জৈন্তাপুর বিওপির সদস্যদের হাতে আটক হওয়া চিনিভর্তি একটি ট্রাক ( ঢাকা মেট্রো -ট- ২৪-০৬৭৫) যার মালিক ছিলেন আবুল কাশেম। চোরাকারবারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ই আগস্ট দেশের ঐতিহাসিক পট-পরিবর্তনের দিন নলজুরী এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠে আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জনের একটি দল।

Manual6 Ad Code

ওইদিন বিকেলে স্থানীয় গোপেশ শর্মার ছেলে গোপাল শর্মার বাড়ীতে হামলা চালানো এবং বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এরপর নলজুরী বাজারে গোপাল শর্মার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা করা হয় আবুল কাশেমের নেতৃত্বে। পরে ভূক্তোভোগী গোপালশর্মা ১৯ আগস্ট গোয়াইনঘাট থানায় আবুল কাশেমকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ জনকে আসামি করে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। ডায়েরি নং- ৪৩৪।

চোরাকারবারি ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাঝেই ক্ষান্ত হননি আবুল কাশেম গংরা বরং তাদের ওপর রয়েছে নিজ এলাকায় ব্যবসায়ীর গাড়ী গতিরোধ করে মারধর, নগদ টাকা ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে কশেমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয় ঢাকার বাড্ডা থানায়। যার নং ৩৬/২৫। এমন অসংখ্য মামলার আসামি হয়েও দিব্বি চোরাচালান, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন তিনি।

আবুল কাশেমের ও তার দুই সহযোগীর প্রতিহিংসার শিকার হন ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। তাকে অপহরণ করে তার উপর বর্ররচিত আক্রমণ করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে মানববন্ধন করে ৩নং পূর্ব ছাত্র ইউনিয়নসহ সাধারণ জনগণ।

নলজুরী মোকামবাড়ী এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হাসিম সুন্দই গণমাধ্যমে বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এদেশে অতীতেও হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা অত্র এলাকাতে কোনোদিন ছিল না। আবুল কাশেম সম্প্রতি সময়ে যে সব কর্মকাণ্ড করছে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুব বাজে ইঙ্গিত। ইতিমধ্যে অত্র এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এলাকা তামাবিল স্থল বন্দরের অনেক ব্যবসায়ীকে সে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের মত ঘটনা ঘটছে। হরিপুরের সুফিয়ানকে তার দলবল নিয়ে নলজুরী বাজারে মারধর করে লুটপাট করলো আবার সুফিয়ানকে প্রধান আসামি করে হয়রানি মুলক মামলাও করেছে। সেই মামলায় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে আসামি দিতেও সে কুণ্ঠা বোধ করে নাই।

এ বিষয়ে আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি গণমাধ্যমে জানান- তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ওসির বলেন, আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

Manual3 Ad Code

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code
error: Content is protected !!