ছাতকে চিকিৎসক সংকটে পুঁজি, নীপা ফার্মেসি মালিকের সিন্ডিকেট | সাপ্তাহিক তদন্ত রিপোর্ট

শনিবার, ১৯ Jul ২০২৫, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

ছাতকে চিকিৎসক সংকটে পুঁজি, নীপা ফার্মেসি মালিকের সিন্ডিকেট

ছাতকে চিকিৎসক সংকটে পুঁজি, নীপা ফার্মেসি মালিকের সিন্ডিকেট

ছাতক সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি চিকিৎসকের সংকটকে পুঁজি করে এক ধরনের ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে।

গাইনি চিকিৎসক ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং ছাতক ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকার নীপা ফার্মেসি মিলে এই ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এতেকরে চরম বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

‘সিন্ডিকেট’র বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি আদায়, টিকিট বাণিজ্য, দুর্ব্যবহার, ভেজাল ওষুধ বিক্রি এবং রোগীদের জোরপূর্বক নির্দিষ্ট ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনার চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা সপ্তাহে তিনদিন নীপা ফার্মেসিতে চেম্বার করেন এবং এ সময় তিনি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি রাখেন। এসময় পেশাগত নৈতিকতা লঙ্ঘন ও হাসপাতালে চিকিৎসক শূন্যতাকে পুঁজি করে নিজের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা।

এদিকে চিকিৎসকের সঙ্গে মিলে সিন্ডিকেটে জড়িত নিপা ফার্মেসীর কর্মীরা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, টিকিট বাণিজ্য, ভেজাল ওষুধ বিক্রি এবং জোরপূর্বক তাঁদের কাছ থেকে ঔষুধ কেনার জন্য রোগীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন ফার্মেসীর কর্মীরা।

তাছাড়া সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়ার নামে রোগীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার এবং এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে হুমকির শিকার হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছেন, সানী দাস, কাওসার, শওকত আহমেদ, মো. লিটন, তম্নয় দেব, সিন্টু দাস, দুলাল মন্ডল ও আব্দুল হুক সাফওয়ানসহ একাধিক ভুক্তভোগী।

‘সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে এবং প্রতিবাদ করলে হুমকির শিকার হতে হয়েছে’ বলে জানান তাঁরা।

এদিকে ফার্মেসির মালিকের ছেলে জুয়েল ভৌমিক ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে, যা তাদের বেপরোয়া আচরণের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

পুরো ঘটনার জন্য ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং নীপা ফার্মেসি উভয়ই সমানভাবে দায়ী বলে মনে করছেন অভিযোগকারীরা। চিকিৎসকের নৈতিক স্খলন এবং ফার্মেসির আর্থিক লোভ ও ক্ষমতার দাপট—এই দুইয়ের সমন্বয়েই ছাতকের স্বাস্থ্যসেবায় এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ বিষয়ে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কাছে যখন যে বিষয়ে রোগীরা আসেন, প্রয়োজন অনুযায়ী আমার যেভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন আমি ঠিক সেভাবেই তাদের সাথে ব্যবহার করি। কেউ যদি মনে করে আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডিস্টার্ব করলে বা ফার্মেসি কর্তৃপক্ষকে ডিস্টার্ব করলে আমি অন্য জায়গায় চেম্বার করবো তাহলে তারা ভুল ভাবছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি অন্য কোথাও চেম্বার করব না। আমার ছাতকে চেম্বার করার কোনো প্রয়োজন নেই। ছাতকে চেম্বার করতে আমার কষ্ট হয়। নিজের এলাকাকে ভালোবাসি বলে ছাতকে চেম্বার করতে আসি। ফার্মেসির মালিক সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না, ফার্মেসীর মালিক ভালো বলতে পারবেন।’

এ ব্যাপারে নীপা ফার্মেসির মালিকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে ফার্মেসিতে কর্মরত তুষার নামে এক ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ম্যাডামের কিছু আত্মীয়-স্বজন ও দূর থেকে আসা রোগীদের জন্য উপরের কিছু সিরিয়াল খালি রাখতে হয়। যে বা যারা এটা যদি টিকেট সিন্ডিকেট মনে করেন তাহলে টিকেট সিন্ডিকেটই। আর যে বা যারা টাকার বিনিময়ে টিকেট সিন্ডিকেটের কথা বলে তাদেরকে ফার্মেসীতে নিয়ে আইসেন।’

ছাতক বাজার ফার্মেসি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘২৯ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আমার ফার্মেসিতেও ডাক্তার আসেন। কখনও সিরিয়াল বা কোনো বিষয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু, কী কারণে নীপা ফার্মেসিতে বারবার সমস্যা হয় তা সঠিক বলতে পারবো না। ফার্মেসির মালিকের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন জানান, ‘নীপা ফার্মেসিতে যদি ফাতেমা ম্যাডামকে নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়, এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। অফিস টাইম পরে যদি তিনি চেম্বার করেন এ বিষয়ে আসলে আমার কথা বলার অধিকার নেই। তার চেম্বার বা ফার্মেসির বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ দিতে পারেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo
error: Content is protected !!