জকিগঞ্জ সংবাদদাতা: সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী নোমান উদ্দিন (৫০) হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। হত্যাকাণ্ড ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত চললেও শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি পাওয়া যায়নি।
গত ১ অক্টোবর বুধবার বিকেলে কালিগঞ্জ বাজারসংলগ্ন শায়লা স্মৃতি হাসপাতালের পেছনের ধানক্ষেত থেকে নোমান উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা ও পরিবারের সদস্যরা মরদেহ শনাক্ত করেন। নিহত নোমান পূর্ব মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা, তিনি মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে। প্রায় ২০ বছর সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে কালিগঞ্জ বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন।
নিহতের পরিবারের বরাতে জানা যায়, ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে তিনি দোকানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে শায়লা স্মৃতি হাসপাতালে যান এবং এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিনই স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জকিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করছেন এলাকাবাসী।
নোমান উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধারের পর পরিবারের কেউ থানায় আসেননি, বরং সারারাত লাশ পুলিশ পাহারায় ছিল বলে জানা গেছে। নিহতের মেয়ে মুন্নি বেগম একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা করবেন। তবে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদেরকে সন্দেহ না করারও পরামর্শ দেন তিনি। এই বক্তব্য স্থানীয়দের মাঝে আরও বিভ্রান্তি ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার পর নিহতের শ্যালক সুমন আহমদ এবং এতিছামনগরের এক ব্যক্তি থানায় গিয়ে অসংলগ্ন বক্তব্য দিয়েছেন। ঘটনার সময় নিহতের বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরা সরিয়ে ফেলার অভিযোগও উঠেছে। মরদেহ দেখতে এসে নিহতের শ্যালক দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “ঘটনার পর থেকে নিহতের স্ত্রী, সন্তান, শ্যালক ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়সহ অন্তত ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একাধিক দিক মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। এটিকে আমরা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করছি। তবে এখনো প্রকাশ করার মতো কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি।”
এদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ—এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পারিবারিক বিরোধ, সম্পত্তির লেনদেন ও মুক্তিপণ নাটকের আড়ালে একটি গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে। তারা দ্রুত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply