"আমরা নেতা হতে চাই না, জনগণের সেবক হতে চাই: জামায়াত ইসলামী | তদন্ত রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
“আমরা নেতা হতে চাই না, জনগণের সেবক হতে চাই: জামায়াত ইসলামী

“আমরা নেতা হতে চাই না, জনগণের সেবক হতে চাই: জামায়াত ইসলামী

Manual1 Ad Code

এম,এ,মান্নান,নিয়ামতপুর: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জামায়াত ইসলামী একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তবে তারা নিজেদের কেবলমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বরং জনগণের সেবক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, রাজনীতি ক্ষমতার জন্য নয়, বরং মানুষের কল্যাণের জন্য। তারা বিশ্বাস করে, রাজনীতি মানে হলো আমানত—এটি জনগণের দায়িত্ব পালনের একটি উপায়। তাই তারা জনগণের সামনে নিজেদের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী নয়; বরং জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে আগ্রহী।

Manual2 Ad Code

জামায়াত ইসলামী মনে করে, নেতৃত্ব একটি বড় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যদি সঠিকভাবে পালন না করা যায় তবে তা জনগণের সাথে বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তারা বলে আসছে, তাদের লক্ষ্য কখনো শুধুমাত্র সংসদে আসন দখল বা ক্ষমতার চাবিকাঠি হাতে নেওয়া নয়। বরং তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে মানুষ শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়ের অধিকার পাবে। তাদের রাজনৈতিক দর্শনে জনগণের সেবা করার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়।

Manual3 Ad Code

তারা বিশ্বাস করে, ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে দেশ পরিচালিত হলে সমাজে দারিদ্র্য, অন্যায়, দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর হবে। আর এ কারণেই তারা নিজেদেরকে কেবল নেতা নয়, জনগণের সেবক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। তাদের মতে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা, শিক্ষার প্রসার ঘটানো, স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতা করা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা—এসবই একটি সেবকের মূল দায়িত্ব।

জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ আরও বলে, তারা রাজনীতিকে ইবাদতের অংশ মনে করে। অর্থাৎ, তারা রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। এই দর্শনের কারণেই তারা জনগণের সামনে স্পষ্ট করে বলে, “আমরা নেতা হতে চাই না, আমরা জনগণের সেবক হতে চাই।”বাস্তবতায় দেখা যায়, রাজনৈতিক দলের মূল শক্তি হলো জনগণ। জনগণের সেবক না হয়ে যদি কেবল নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তবে রাজনীতি জনগণের কল্যাণে কাজ করে না। কিন্তু জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ তাদের অবস্থান থেকে স্পষ্ট করেছে যে, তারা জনগণকে ব্যবহার করতে আসেনি; বরং জনগণের সঙ্গে থেকে তাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অংশীদার হতে চায়।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনগণের সেবার রাজনীতি করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। দলের নায়েবে আমীর ও বর্তমান আমীর ডা. শফিকুর রহমান একাধিক সমাবেশ ও সভায় বলেছেন, জামায়াত কখনোই ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করে না। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো জনগণের কল্যাণ, ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া।সম্প্রতি ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমাদের পূর্ববর্তী সংগ্রাম ছিল ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। এবার আমাদের সংগ্রাম হবে দুর্নীতি, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে। যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।” তিনি আরও আশ্বাস দেন, দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য জামায়াত দৃঢ় অবস্থান নেবে এবং জনগণের সম্পদ দখল বা জমি হরণের মতো অপকর্ম রক্ত দিয়েও প্রতিরোধ করা হবে।ডা. শফিকুর রহমান পরিষ্কার ভাষায় বলেন, জামায়াত ইসলামী জনগণের কাছে নেতা হতে চায় না, বরং সেবক হতে চায়। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনীতি মানেই হচ্ছে জনগণের সেবা করা এবং সমাজে শান্তি, ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা করা। তার ভাষায়, “রাজনীতি আমাদের কাছে ইবাদতের অংশ। আমরা জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি, ক্ষমতার জন্য নয়।”দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সফরে গিয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে সবার আগে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা হবে। কৃষক-শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হবে এবং যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।এছাড়া সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা। লক্ষ্মীপুরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে প্রত্যেকেই নিরাপদ থাকবে, নারীসমাজ সম্মান ও মর্যাদা পাবে, এবং দেশ কুরআনের ন্যায়ের নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।”গত বছর জামায়াতে ইসলামী থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, বাংলাদেশে যেন আর ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি না হয়। তিনি বলেন, জামায়াত অতীতে কখনো জাতিকে বিভক্ত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। বরং ঐক্যবদ্ধ জাতিই তাদের লক্ষ্য, যাতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও একই সুরে বলেছেন, জামায়াত ইসলামী ক্ষমতায় গেলে তারা গণমানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব, দুর্নীতি ও বৈষম্য দূরীকরণ এবং উন্নয়নকে জনগণের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করবে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নতুনভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করছে। তারা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বরং সেবাধর্মী সংগঠন হিসেবে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে চাচ্ছে।সুতরাং বলা যায়, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের মূল দর্শন হলো সেবাধর্মী রাজনীতি। তারা মনে করে প্রকৃত রাজনীতি হলো মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনা। জনগণের দুঃখ-কষ্টে পাশে দাঁড়ানোই রাজনীতিবিদের আসল পরিচয়। আর এই কারণেই তারা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, নেতা নয়, জনগণের সেবক হিসেবেই তারা কাজ করে যাবে।

Manual4 Ad Code

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code
error: Content is protected !!