দশ মাসে বন্ধ ৪১ কারখানা, ধস নেমেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বাসা ভাড়ায় | সাপ্তাহিক তদন্ত রিপোর্ট

বুধবার, ৩০ Jul ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
সিন্ডিকেটে জিম্মি যশোর ভ্যাট কমিশনারেট, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার! দশ মাসে বন্ধ ৪১ কারখানা, ধস নেমেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বাসা ভাড়ায় গোয়াইনঘাটে লেবাসধারী নছিব মোল্লার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ গোয়াইনঘাটে শাহী ঈদগাহের কাজ না করে অর্থ আত্মসাৎ অপরাধ দমনে সাহসী ভূমিকা রাখছেন ওসি তৌহিদুল ইসলাম ছাতক এলজিইডি প্রকৌশলী’র বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উত্তরায় ফাইটার জেট বিধ্বস্ত মাইলস্টোন স্কুল সংলগ্ন মাঠে ভয়াবহ বিস্ফোরণ আহত বহু ১২ মিনিটে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত: আহত ১৬৪, নিহত ১৯ ছাতকে চিকিৎসক সংকটে পুঁজি, নীপা ফার্মেসি মালিকের সিন্ডিকেট ইউপি সদস্যের ঘরে দুই হতদরিদ্রের বরাদ্দের চাল 
দশ মাসে বন্ধ ৪১ কারখানা, ধস নেমেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বাসা ভাড়ায়

দশ মাসে বন্ধ ৪১ কারখানা, ধস নেমেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বাসা ভাড়ায়

সাপ্তাহিক তদন্ত রিপোর্ট 

পোশাক শিল্পে চলমান নানা অস্থিরতা ও সংকটের কারণে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা। শুধু গাজীপুর জেলাতেই গত ১০ মাসে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৪১টি কারখানা। ফলে চাকরি হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বাসা ভাড়ায় ধস নেমেছে— উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে আয় ও চাহিদা।

মালিক-শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় দুই হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা এক হাজার ১৫৪টি। ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৪১টি কারখানা স্থায়ী ও দুটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। অর্ডার না থাকা, আর্থিক সমস্যা, কাঁচামালের অভাব নানা সমস্যার কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এতে হাজার হাজার শ্রমিক পেশা বদল করতে দেখা গেছে।

এদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়ি ভাড়াসহ নানা ক্ষুদ্র পেশায় ধস নেমেছে। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাড়া বাসা বদল করে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়েছেন অনেকে। মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, শ্রীপুর ও টঙ্গী এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চাকরি নিয়েছেন। আবার অনেক পুরুষ পোশাক শ্রমিক চাকরি ছেড়ে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। নারী পোশাক শ্রমিকদের মধ্যেও অনেকে অন্যত্র গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

অনেকে আবার গাজীপুরে থেকে টেইলারিং ও কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

মহানগরীর কাশিমপুরের বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিক রমজান আলী বলেন, ‘আমি প্রায় ১০ বছর বেক্সিমকো কারখানায় চাকরি করতাম। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখানকার প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের চাকরি চলে যায়। অনেকে বেকার হয়ে যান। অনেকে অন্যত্র চাকরি নেয়। আমি পাশে একটি ছোট কারখানায় কাজ নিয়েছি। পরিবার নিয়ে কোনো মতে চলছি। তবে চাকরিচ্যুত বেশিরভাগ শ্রমিক এলাকা ত্যাগ করেছেন।

ওই এলাকার মুদি দোকানি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন সেটি ৩-৪ হাজারে নেমে এসেছে। এলাকায় আগের মতো বেচাকেনা নেই।

ওই এলাকার বাড়িওয়ালা লোকমান হোসেন বলেন, ‘এক সময় বাসা ভাড়ার জন্য প্রতিদিন লোক আসতেন। এখন ভাড়াটিয়ার চাপ কমে গেছে। অনেকের বাসা খালিও থাকছে। কোনাবাড়ি এলাকায়ও কেয়া গ্রুপের বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যান। ’

বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে মহানগরীর সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি, টঙ্গির সাতাইশ এলাকার টিএমএস অ্যাপারেলস, কোনাবাড়ীর এলাকার পলিকন লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস, টিআরজেড, দি ডেল্টা নিট, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল ও মাহমুদ জিন্স অন্যতম।

এদিকে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তারা ভাঙচুর, বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটান। এতে প্রায় সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা।

এ বিষয়ে গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর মহানগর সভাপতি শফিউল আলম বলেন, ‘এক বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করেনি। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা সমূহের শ্রমিকদের পাওনাদিও কারখানা মালিকরা পরিশোধ করেন না। এতে অনেক শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে জেলায় অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আর্থিক সমস্যা, কাঁচামালের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে। এছাড়াও কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মহীন শ্রমিকদের অনেকে সড়ক-মহাসড়কে নামে। তাদের আন্দোলন থামাতেও পুলিশের অনেক বেগ পেতে হয়। ’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo
error: Content is protected !!