সিন্ডিকেট করে পরিবহন ঠিকাদারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আখের গোছানোর অভিযোগের তীর রয়েছে- জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সহ সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড কার্যালয়ের- ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) প্রকৌ. মোঃ রেজাউল ইসলাম ও লিক্যুইড পেট্রোলিয়াম মার্কেটিং ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক (এলপিএম) প্রকৌ. এ কে এম আলমগীর আজাদ এবং প্রকিউরমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এর উপমহাব্যবস্থাপক (প্রকিউরমেন্ট) মো: আতিকুর রহমানের দিকে।
সুত্রমতে, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের তেল ও নানান পণ্য পরিবহনের জন্য পরিবহন ঠিকাদারী নিয়োগের নামে বিগত ২০২১ সাল থেকে চলছে সিডিউল বিক্রি এবং রি-কন্ট্রাক্টের নামে পুরাতন ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানকে ফের বহাল তবিয়তে রাখার নামে এক জমজমাট বাণিজ্য। এ ধারাবাহিকতায় বিগত ৪ বছর ধরে পুরাতন ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহালের মারফতে চলছে বেপরোয়া এক নিরব বাণিজ্য। এতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন সমগ্রঃ দেশ হইতে আগত দরপত্র আহ্বানকারী নতুন ৭০ থেকে ৮০টির অধিক ঠিকদারী প্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ ওঠছে। এতে ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিড়ম্বনা পোহালেও পকেটভারী হচ্ছে এবং হয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের সাবেক ও চলতি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেও অভিযোগ প্রকাশ।
এদিকে, তেল ও নানান পণ্য পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য ভুক্তভোগী জানান- বিগত ২০১৮ সালে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের আওতাধীন রশিদপুর কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্লান্ট (আরসিএফপি), রশিদপুর দৈনিক ৪০০০ ব্যারেল ক্ষমতাসম্পন্ন কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্লান্ট রশিদপুর দৈনিক ৩০০০ ব্যারেল ক্ষমতাসম্পন্ন সিআরইউ প্লান্ট, কৈলাশটিলা, বিয়ানীবাজার, হরিপুর গ্যাস ফিল্ড ও কৈলাশটিলা এলপিজি প্লান্টে উৎপাদিত মটর স্পিরিট, ডিজেল, কেরোসিন ও অকটেন দেশের অভ্যন্তরে যেকোন স্থানে এবং উক্ত ফিল্ডসমূহে উৎপাদিত পেট্রোলিয়াম পণ্য (হেভী কনডেনসেট, লাইট কনডেনসেট, মটর স্পিরিট, ডিজেল, কেরোসিন ও অকটেন) এক ফিল্ড থেকে অন্য ফিল্ডে ট্যাংকলরী/বাউজারে পরিবহনের জন্য একাধিক পরিবহন ঠিকাদারী নিয়োগের নামে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
পরে বিগত ২০২০ সালে সিডিউল বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ৮০ থেকে ৮২ জন সিডিউল ক্রয় করলেও অদৃশ্য কোন কারণে সিডিউল জমা নেওয়ার একদিন আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিডিউল জমার বদলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রি-কন্ট্রাক্টের নামে পুরাতন ২২ থেকে ২৩টি পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলাকে বহাল তবিয়তে রাখেন ও কার্যক্রমও চলতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিগত ৪ বছর ধরে এরকম দরপত্র আহ্বান করলে ফের নতুন ওই ৮০ থেকে ৮২টি পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিডিউল ক্রয় করে। তবে ঘুরেফিরে যেমন লাউ তেমন কদু। ওই আগের মতোই সিডিউল জমা নেওয়ার একদিন আগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অফিস নোটিশ মারফতে এই দরপত্র স্থগিত করেন এবং কৌশলে রি-কন্ট্রাক্ট বাণিজ্যের মারফতে ঐ পুরাতন পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহাল তবিয়তে রেখে তাদের কার্যক্রমের সু-ব্যবস্থা করে দিয়ে যাচ্ছেন।
নিয়োগের নামে বিগত ৪ বছর যাবৎ দরপত্র আহ্বান, সিডিউল বিক্রিসহ রি-কন্ট্রাক্ট বাণিজ্যে চলছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের ইশারায়। মূলত তাদের ছত্রছায়ায় নিয়োগের নামে এই বাণিজ্যে সরাসরি জড়িতসহ নিয়ন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) প্রকৌ. মোঃ রেজাউল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক (এলপিএম) প্রকৌ. এ কে এম আলমগীর আজাদ বলে এমন অভিযোগ তাদের।
ভুক্তভোগীরা আরোও বলেন- বিগত ২৯/১০/২০২৩ ইং সালে একাধিক পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জন্য দরপত্র আহ্বান করে প্রায় ৮০ জনের নিকট সিডিউল বিক্রিও করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যাহার একেকটি সিডিউলের দাম প্রায় ৫ হাজার টাকা। দেশের ভিন্ন জেলার পরিবহন ঠিকাদারী নিয়োগে প্রায় ৮০টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিডিউল ক্রয় করেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সিডিউল জমার বদলে বিগত ২২/১১/২০২৩ ইং তারিখে ঘুরেফিরে রি-কন্ট্রাক্ট বাণিজ্যের মারফতে পুরাতন ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহাল তবিয়তে রাখা হয়।
এরপরও সর্বশেষ গত ১০/১২/২০২৪ ইং তারিখে পরিবহন ঠিকাদারী নিয়োগে পূনরায় দরপত্র আহ্বান করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তখন আশায় বুক বেধে ফের নতুন প্রায় ৮২টি নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিডিউল ক্রয় করেন। প্রতিবারের ন্যায় এবারও সিডিউল জমার আগের দিন অথাৎ গত ০৭/০১/২০২৫ ইং তারিখে ঘুরেফিরে রি-কন্ট্রাক্ট বাণিজ্যের মারফতে পুরাতন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহাল রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলরূপ বিগত ৪ বছর ধরে শুধুই চলছে সিডিউল বিক্রি ও সিডিউল প্রস্তুতের নামে অংশগ্রহণকারী এসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও কলাকৌশলে প্রতিটি ফাইলে ঘুষ নিচ্ছেন লাখ থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত বলেও অভিযোগ প্রকাশ।
সুত্রমতে, পরিবহন ঠিকাদারী নিয়োগের নামে রি-কন্ট্রাক্টে বহাল তবিয়তে থাকতে ঐ পুরাতন ২২/২৩টি পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে গড়েছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কলকাঠি নাড়ছেন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও রমনা পেট্রোল পাম্পের মালিক এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা নাজমুল হক ও ফাতেমা নাছ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। রমনা পেট্রোল পাম্পের মালিক নাজমুল হক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় বিগত সময়ে অপরাধ করেও পার পেয়েছিলেন।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির দিন অর্থাৎ বিগত শনিবার (২০২২ সালের ৬ আগস্ট) রাজধানীর রমনা পেট্রোল পাম্পে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যেখানে প্রমাণ মিলে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে এমন আভাস পেয়ে, আগের দিনই শুক্রবার (৫ আগস্ট) বেলা ৬টায় বিনা নোটিসে পাম্প বন্ধ করে দেয় রমনা পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ। অধিদপ্তরের অভিযানে, শুক্রবার যখন রমনা পেট্রোল পাম্পটি বন্ধ করা হয়েছিল তখনও পাম্পে মজুদ ছিলো ২৭ হাজার ৬২৩ লিটার অকটেন এবং ৩ হাজার ৮৬৪ লিটার ডিজেল। লিটারে ৪৬ টাকা অকটেনে এবং ডিজেলে ৩৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায়, এক দিনেই রমনা পেট্রোল পাম্পের মুনাফার পরিমাণ ১৪ লাখ ২ হাজার ৩৪ টাকা। শুধু এই অবৈধ মুনাফাই নয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অধিদপ্তরের অভিযানে সেসময় কোন লাইসেন্সই দেখাতে পারেনি রমনা পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ বিষয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (এলপিএম) প্রকৌ. এ কে এম আলমগীর আজাদের ব্যবহৃত সেলফোন যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টিতে জটিলতা রয়েছে মর্মে জানিয়ে সরাসরি তার অফিসে যাওয়ার আমন্ত্রণ করেন। সংবাদটির প্রকাশে আদৌ এমন কোন জটিলতা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিতের জন্য তদন্ত রিপোর্ট কর্তৃপক্ষ গত ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে সময় ১২টা ২৩ মিনিটে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হলেও প্রায় ঘন্টাখানেক তাদের অপেক্ষা করিয়ে অদৃশ্য কারণে তিনি সরাসরি সামনেও আসেন নি বা জটিলতা কি সে বিষয় কোন কথাও বলেননি।
এদিকে অভিযোগ বিষয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) প্রকৌ. মোঃ রেজাউল ইসলামকে অফিসে পাওয়া যায়নি বিধায় তার ব্যবহৃত সেলফোন যোগাযোগ করলে তিনি ফোনকল রিসিভ করেনি।
Leave a Reply