বিশেষ প্রতিবেদন
বিশ্বের দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফের তীব্র হচ্ছে স্নায়ুযুদ্ধের আবহ। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দেওয়ায় ক্রেমলিনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর বাস্তব প্রতিফলন ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে সামরিক প্রস্তুতি ও শক্তি প্রদর্শনে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার জলসীমার কাছাকাছি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করেছে। এতে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে— সমুদ্রের অতল তলে কার শক্তি বেশি? সাবমেরিন প্রযুক্তি ও আধিপত্যের দৌড়ে কে এগিয়ে?
যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক সাবমেরিন বহর
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে শক্তিশালী ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন, যেগুলোকে ‘বুমার’ নামে ডাকা হয়। বর্তমানে নৌবাহিনীর বহরে রয়েছে অন্তত ১৪টি ওহাইও-ক্লাস সাবমেরিন। প্রতিটি সাবমেরিনে রাখা যায় সর্বোচ্চ ২০টি ট্রাইডেন্ট-২ ডি৫ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা সমুদ্রে দীর্ঘ ১৫ বছর পর্যন্ত বড় কোনো মেরামত ছাড়াই টহল দিতে সক্ষম।
এছাড়া রয়েছে আক্রমণাত্মক সাবমেরিনের বিশাল বহর। এর মধ্যে ২৪টি ভার্জিনিয়া-ক্লাস, ৩টি সিউলফ-ক্লাস ও ২৪টি লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত। এসব সাবমেরিনে টমাহক ও হারপুন ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি এমকে-৪৮ টর্পেডো মোতায়েন করা হয়, যা শত্রু জাহাজ ধ্বংস, নজরদারি, মাইন যুদ্ধ ও গোয়েন্দা অভিযানে ব্যবহৃত হয়। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে অন্তত ৫১টি আধুনিক ও শক্তিশালী সাবমেরিন।
সংখ্যায় এগিয়ে রাশিয়া
রাশিয়ার সাবমেরিন বহর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বড়। দেশটির কাছে রয়েছে প্রায় ৬৪টি সাবমেরিন, যার মধ্যে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরক্ষার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। যদিও রাশিয়ার সাবমেরিন সম্পর্কিত অনেক তথ্য গোপন রাখা হয়, জানা গেছে দেশটির সবচেয়ে আধুনিক সাবমেরিন হলো বোরেই-ক্লাস এসএসবিএন। বর্তমানে আটটি বোরেই সাবমেরিন সক্রিয় রয়েছে।
এছাড়া রয়েছে বিখ্যাত আকুলা-ক্লাস সাবমেরিন, যা ‘শার্ক’ নামেও পরিচিত। এটি নিঃশব্দ চলাচলের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস সাবমেরিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে পাঁচটি আকুলা-ক্লাস সক্রিয় রয়েছে এবং এতে ক্যালিবার, অনিক্স বা গ্রানিত ক্ষেপণাস্ত্রসহ টর্পেডো বহন করা হয়।
আধিপত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে সাবমেরিন শক্তি
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের সাবমেরিন সক্ষমতা এখন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং সামুদ্রিক আধিপত্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমুদ্রের গভীরতা হয়ে উঠেছে পরাশক্তিদের প্রতিযোগিতার নতুন মঞ্চ, যেখানে আবারও যেন ফিরে আসছে স্নায়ুযুদ্ধের ছায়া।
সাপ্তাহিক তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গেই থাকুন।
Leave a Reply