পিরের বাজারের দুই কিশোরীকে দিয়ে কক্সবাজারে দেহ ব্যবসা: জড়িত মা-ছেলে | তদন্ত রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
পিরের বাজারের দুই কিশোরীকে দিয়ে কক্সবাজারে দেহ ব্যবসা: জড়িত মা-ছেলে

পিরের বাজারের দুই কিশোরীকে দিয়ে কক্সবাজারে দেহ ব্যবসা: জড়িত মা-ছেলে

Manual4 Ad Code

মোঃ রায়হান হোসেন: পোশাক কারখানায় চাকরির কথা বলে সিলেটের দুই কিশোরীকে কক্সবাজারে পাচার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদেরকে দিয়ে করানো হতো দেহ ব্যবসা। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী ওই দুই কিশোরী কক্সবাজার থেকে পালিয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় এসে পুলিশের কাছে তাদের পাচারের লোমহর্ষক বর্ননা ও নির্যাতনের কথা জানায়।

বর্তমানে নির্যাতিতা ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী দুই কিশোরীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। ওই দুই কিশোরীর বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলার পিরেরবাজার এলাকায়।

Manual8 Ad Code

নির্যাতিতা কিশোরীরা গণমাধ্যমে জানায়, টেলিভিশনে ধারাবাহিক নাটক দেখার সুবাধে শাহনাজ বেগম নামে এক প্রতিবেশীর বাসায় প্রায়ই যাতায়াত ছিল তাদের। গত ৮ এপ্রিল শাহনাজ বেগম নামের ওই প্রতিবেশী নারী তাদের দু’জনকে পোশাক কারখানায় চাকরির কথা বলে সিলেট থেকে এনা বাসযোগে কক্সবাজারে তার ছেলে কাছে পাঠায়। এরপর সে তাদেরকে কৌশলে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে নেয়। পরদিন জ্ঞান ফিরলে ওই দুই তরুণী নিজেদেরকে আবাসিক হোটেলের বন্দি রুমে দেখতে পায়। এরপর আহমেদ দ্বীন, শিউলি ও ক্লাসিক আবাসিক হোটেলসহ একেকদিন একেক হোটেলে নিয়ে তাদেরকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতো শাহনাজ বেগমের ছেলে ইমন আহমদ। গত ৯ এপ্রিল রাত থেকে শুরু করে ২৩ এপ্রিল রাত পর্যন্ত তাদের দুজনকে এসব কুকর্মে ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ওই দুই তরুণী কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে সিলেটের শাহপরান থানায় এসে উঠে।

Manual7 Ad Code

অভিযুক্ত নারী শাহনাজ বেগম সিলেট সদর উপজেলার পিরেরবাজার এলাকার মুরাদ আহমদের স্ত্রী এবং তার সহযোগী ইমন আহমদ শাহনাজ আহমদের প্রথম স্বামী ঘরের ছেলে। ইমন আহমদের বাড়ি চট্টগ্রামে।

এদিকে, গত ৮ এপ্রিল দুই কিশোরী নিখোঁজের ঘটনায় তাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় থাকা পরিবারের পক্ষ থেকে শাহপরান থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর থেকে গতকাল ২৪ এপ্রিল বিকাল পর্যন্ত তারা দুজন নিখোঁজ ছিলো।

ভুক্তভোগী এক কিশোরীর মা রোবেনা আক্তার গণমাধ্যমে জানান, শাহনাজ বেগম আমার প্রতিবেশী। স্বামী না থাকায় আমি কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে গেলে আমার মেয়ে রিয়া ও প্রতিবেশী সানা উল্লার মেয়ে মীম দুজনেই টিভি দেখতে পাশের বাসার শাহনাজ বেগমের বাসায় যেতো। ওই মহিলা তাদের দুজনকে খুব আদর-স্নেহ করতো, সেকারণে আমিও কখনো ওই বাসায় যেতে বারণ করিনি। কিন্তু দুই মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে শাহনাজ বেগমের আচার-ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করি। সে প্রায়শই আমাদের মেয়েদের নিয়ে নানা রকম আজগুবি কথাবার্তা শোনাত। আমাদেরকে দোষারোপ ও গালিগালাজ করতো। এখন দীর্ঘ ১৫ দিন পর মেয়ে দুটো ফিরে এসে যে বর্ণনা দিচ্ছে তাতে তো ওই মহিলার ভয়ংকর রূপ আমাদের কাছে ফুটে উঠেছে।

Manual3 Ad Code

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েসহ দুই কিশোরীর জীবন নষ্ট করে দিয়েছে শাহনাজ বেগম। প্রায় ১৪ দিন ছোট্ট দুটি মেয়ের শরীরের উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে ওই নারী। বর্তমানে আমার মেয়ে ওসমানী হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

ভুক্তভোগী অপর কিশোরীর বাবা সানাউল্লা গণমাধ্যমে বলেন, আমাদের মেয়েদের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে আমরা তার যথাযথ বিচার দাবি করছি। বিশেষ করে শাহনাজ বেগম ও তার ছেলে ইমন আহমদ। তারা দুজনে মিলে আমাদের মেয়েদের মান-মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিয়েছে। আমরা তাদের দুজনের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।

শাহপরাণ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল চন্দ্র সরকার গণমাধ্যমে বলেন, দুই কিশোরীর মা-বাবা তাদেরকে নির্যাতন করতো, ঘরে আটকে রাখতো। তাই অভিমান করে পূর্ব পরিচিত ওই নারীর ফাঁদে পা দেয়। কাজের জন্য তাদেরকে সেখানে নেওয়া হয়েছিল কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সেখানে তাদেরকে আটকে পাশবিক নির্যাতনের ব্যাপারে বলেন, একটি বাসায় তাদেরকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তারা সেখান থেকে মুক্ত হয়ে সিলেটে আসেন।

Manual2 Ad Code

শাহপরাণ থানার ওসি মো. মনির হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অভিমান করে দুই বান্ধবী কক্সবাজার পালিয়ে যায়। এরপর তারা দুজনে বৃহস্পতিবার সিলেটে ফিরে আসে। এ ঘটনায় দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা মিসিং ডায়েরি পেয়েছিলাম। সে কারণে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে তাদেরকে বুঝিয়ে ফেরত আসতে বলে এবং তারা ফিরে আসে। দুজনকেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

হোটেলে নিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম কোনো কথা তারা আমাদের কাছে বলেনি। এ ছাড়া এমন ঘটনার কোনো অভিযোগও আমরা পাইনি। আমরা যতটুকু জানি, পরিবারের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই বান্ধবী পালিয়েছিল। তাহলে দুই কিশোরী ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি কেন এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code
error: Content is protected !!