মোঃ সুজন আহম্মেদ পাবনা জেলা প্রতিনিধি
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় অনৈতিক কাজে লিপ্ত এক যুবক ও যুবতীকে হাতেনাতে আটক করে স্থানীয়রা পুলিশের হাতে তুলে দেন। কিন্তু মাত্র আট ঘণ্টার মাথায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানরা রহস্যজনকভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। অথচ একই ঘটনায় আটক হওয়া এক গরিব রাজমিস্ত্রির স্ত্রীকে আটকে রেখেই চলে হয়রানি। এই বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পুলিশ কি তবে টাকার কাছে নতি স্বীকার করেছে? বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার শরৎনগরের কেজি স্কুলের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুর উপজেলার চিতুলিয়া গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে মো. মেহেদী হাসান (২২) দীর্ঘদিন ধরে এক যুবতীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। এদিন তারা স্থানীয় সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে স্থানীয়রা তাদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শুধু যুবক-যুবতীকেই নয়, বাড়ির মালিকের স্ত্রী মায়া বেগমকেও আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু পরে রাত নামতেই নাটকীয় পালাবদল ঘটে। আট ঘণ্টার মাথায় অভিযুক্ত যুবক-যুবতী ছাড়া পেয়ে যায়। অথচ অসহায় নারী মায়া বেগমকে আটকে রাখে পুলিশ।
অসহায় স্বামী রাজমিস্ত্রি সিরাজুল ইসলাম বলেন, যাদের টাকা পয়সা আছে, ক্ষমতা আছে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু আমার টাকা-পয়সা নেই বলেই আমার স্ত্রীকে ছাড়লো না পুলিশ।
এ ঘটনায় ভাঙ্গুড়ার সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। জনমনে প্রশ্ন আইন কি কেবল প্রভাবশালী ও টাকার মানুষদের জন্য? গরিবদের কি কোনো ন্যায়বিচার নেই?
স্থানীয়দের মতে, পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমাজে ভুল বার্তা দিচ্ছে। অপরাধীরা প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে, অথচ নিরীহ মানুষরা হয়রানির শিকার হচ্ছে।
প্রবীণ এক ব্যক্তি বলেন, এভাবে যদি টাকা বা ক্ষমতার কাছে আইন হার মানে, তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এই দেশে গরিবদের কি আর কোনো অধিকার নেই?
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, আমরা তাদের থানায় নিয়ে এসেছিলাম। পরে পারিবারিকভাবে সমাধান হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এবং বাড়িওয়ালা মায়া বেগমকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
কিন্তু ওসির এ বক্তব্যে সচেতন মহল সন্তুষ্ট নন। তাদের প্রশ্ন যদি সমঝোতা হয়ে থাকে, তাহলে কেন মায়া বেগমকে কেন জেল হাজতে প্রেরণ করা হলো?
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙ্গুড়ার এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া জরুরি। প্রভাবশালী অভিযুক্তদের মুক্তি ও গরিব নারীর আটক এই বৈষম্যের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে।
Leave a Reply