তদন্ত রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে সারাদেশে মোট ১১টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। যারমধ্যে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয় অন্যতম। এ ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে রয়েছে মোট ১০টি জেলা। এই ১০ জেলার মধ্যে সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে। যার কারণ দেশের তামাক উৎপাদন বহিঃবিশ্বে রপ্তানি এমনকি অসংখ্য সিগারেট ও তামাক ফ্যাক্টরি রয়েছে এ দুই জেলায়। কুষ্টিয়ার বিখ্যাত সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলো- ভারগন টোব্যাকো ও ভিক্টর টোব্যাকো।
মূল্য সংযোজন কর ও শুল্ক আইন ২০১২ এর ধারা ৯২ অনুযায়ী এই দুইটি সিগারেট ফ্যাক্টরিতে তত্ত্ববধান সরবরাহ, পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করার জন্য ৩দিন করে একজন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তাকে ডিউটির জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। যাতে করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব না হয়। কিন্তু এই সিগারেট ফ্যাক্টরিগুলাকে কেন্দ্র করে কমিশনারেটে কর্মরত পদস্থ কর্মকর্তা ও সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এক বিশাল সিন্ডিকেট।
জানা গেছে- নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগ থেকে ডিউটির জন্য সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগের আদেশ থাকলেও ঘুরেফিরে যশোর কমিশনারেটে দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত কয়েকজন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে পদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির পথ সুগম করে প্রাপ্ত বিশাল অংকের টাকার অর্ধেক ভাগ পদস্থ কর্মকর্তাদের দেন। যেকারণে পদস্থ কর্মকর্তাদের আশীর্বাদে ঘুরেফিরেই ওই কয়েকজন ভাগিয়ে নিচ্ছেন ডিউটি। যাতে করে সরকার প্রতিমাসে বিশাল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে আর লাভবান হচ্ছেন দূর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
যশোর ভ্যাট কমিশনারেটে এই সিন্ডিকেটের মূলহোতারা হচ্ছেন- সলিল কুমার, রায়হান বাদশা, মোস্তাইন বিল্লাহ, জুলহাস মিয়া, আঃ রউফ, ফেরদৌস ওয়াহিদসহ আরও কয়েকজন। চলতি বছর অথাৎ ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের মারফতে দিগুণ ডিউটি করছেন তারমধ্য- জুলহাস মিয়া (৩ বার), মোস্তফাইন বিল্লাহ (৩বার), রায়হান বাদশা (২বার), আঃ রউফ (২বার), মোঃ নাইম (২বার) ও সলিল কুমার (২বার)। যা দপ্তরের ডিউটির আদেশের তথ্য অনুযায়ী পাওয়া গেছে।
তদন্তে মিলে, এই দু’টি সিগারেট ফ্যাক্টরিতে নিয়ম অনুযায়ী অন্যজেলা থেকে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তাদের ডিউটির জন্য নির্বাচিত করা হলেও বিনিময়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির পথ সুগম করে দৈনিক অবৈধভাবে প্রাপ্ত ১ লাখ টাকার ভাগ সিন্ডিকেট প্রধানের হাতিয়ারখ্যাত সলিল কুমার ও রায়হান বাদশাকে ২৫/৩০ হাজার টাকা দিতে হয় বাধ্যতা মূলক। তবেই মিলবে ডিউটি নামের সোনার হরিণ।
তদন্তে আরও মিলে- যশোর ভ্যাট কমিশনারেটে একক আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগের তীর অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসানের দিকে। এ সিন্ডিকেট তার ইশারাতেই চলে। এক কথায় তার কাছে অসহায় সেখানে কর্মরত কমিশনারও। রাকিবুল হাসান সৈরাচার দোসর আওয়ামীলীগ পরিবারের প্রভাবশালী লোক। শুধু তাই নয় তার এক ভাই বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপর্যায়ের আসীন থাকায় ক্ষমতার প্রভাবে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। গত কয়েকমাস পূর্বে চু্ড়াজদায় অবস্থিত ঙ্ভগজ পিভিসি পাইপ ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা করেন তিনি। তবে চাঁদা না পেয়ে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ঙ্ভগজ পাইপ ফ্যাক্টরির মালিক দুদকে তার নামে চাঁদা দাবির অভিযোগ করলে বেকায়দায় পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকদের মধ্যস্থতায় ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে শেষ রেহাই পান বলে একাধিক বিশস্ত সুত্র জানায়।
সুত্রমতে, গত জুন থেকে শুরু হওয়া NBR ভাগ আন্দোলনে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান গোপনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টায় লিপ্ত। যারফলে NBR সংস্থার ঐক্য পরিষদের আন্দোলন কমিটিতে ৭৬ নাম্বার সিরিয়ালে তার নামটি উল্লেখ আছে। ভ্যাট কমিশনারেটে রাকিবুল হাসানের যন্ত্রণায় দিশেহারা সবাই।
অভিযোগ, সহকারি কমিশনার থেকে রাজস্ব কর্মকর্তা এমনকি সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তাগণও রাকিবুল হাসানকে ঘুষ না দিলে মিলে না ভালো পোষ্টিং। এক কথায় অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসানকে কেন্দ্র করেই ভ্যাট কমিশনারেটে গড়ে উঠেছে সিগারেট ফ্যাক্টরির ডিউটি ও পোষ্টিং বাণিজ্যের এক বিশাল সিন্ডিকেট। এই দূর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিবছর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
Leave a Reply