স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটের সচেতন নাগরিক সমাজ’র উদ্যোগে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্তকরণ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখা ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
বুধবার সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে নগরী হকারমুক্ত করতে যে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়, তার সাথেও একাতত্মা ঘোষণা করে সিলেটের ব্যবসায়ীদের বড় এই দুটি সংগঠন।
শুক্রবার দুপুরে শেষ হয় ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য বেধে দেওয়া সময়। তারপরও ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত না হলে আরো কঠোর কর্মসূচী নিয়ে রাস্তায় নামার হুশিয়ারী প্রদান করেছেন বিভিন্ন সংগঠন ও সিলেটের সর্বস্তরের জনসাধারণ। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসায়ী সংগঠনও দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে উত্তরণে কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেও জানা গেছে।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ নগরীর প্রতিটি মার্কেট, বিপনী বিতান ও দোকান মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, তারা যেন তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা থেকে ভাসমান হকারদের উচ্ছেদ করেন। কোন অবস্থাতেই যেন হকাররা ফুটপাত, রাজপথ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে পশরা সাজাতে না পারে। সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার মহাসচিব ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, সিলেট নগরীর প্রধান সমস্যা হচ্ছে ফুটপাত-রাজপথ দখল করে হকারদের অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া। ফুটপাত হকারমুক্ত করতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আন্দোলন সংগ্রাম করা হলেও তাতে কোন লাভ হয়নি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে হকার উচ্ছেদের চেষ্টা করলে তাতেও সুফল পাওয়া যায়নি।
অবশেষে হকারদের দাবির প্রেক্ষিতে সিসিক’র তৎকালীন মেয়র হকার পুনর্বাসনের জন্য লালদিঘীর পারে জায়গা বরাদ্দ দেন। ফুটপাত ও রাস্তায় না বসার জন্য এই পুনবার্সন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সেখানে হকারা না গিয়ে রহস্যজনক কারণে ফুটপাত দখল করে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করে তারা।
তিনি ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে সিলেটবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ আপামর জনসাধারণ এগিয়ে আসলে এই অবৈধ কার্যকলাপ অবশ্যই বন্ধ হবে। তাই তিনি ন্যায়সঙ্গত এই দাবি বাস্তবায়নে সবাইকে সার্বিক সহযোগিতা ও পাশে দাঁড়ানোর জন্য সর্বাত্মক আহ্বান জানান।
দোকান মালিক সমিতির সিলেট জেলা শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল মল্লিক মুন্না, মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদী পাবেল, দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার সাংগঠনিক সচিব নিয়াজ মো. আজিজুল করিম, দরগাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুফতি নেহাল উদ্দিন, আম্বরখানা বাজার কমিটির সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমদ, নয়াসড়ক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ, জাবেদ আহমদ, কুমারপাড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাহিদ আহমদ, মধুবন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আকিক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ, শুকরিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কিবরিয়া হাসান নিঝুম, সাধারণ সম্পাদক মো. রূপন আহমদ, করিম উল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পাবেল আহমদ, লালদিঘী হকার্স মার্কেট সমিতির সহ সভাপতি আব্দুস সোবহান, মহাজনপট্টি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির রাসেল আহমদ, দক্ষিণ সুরমা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম, ভেজিট্যাবেল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাদ মিয়া, রাজু আহমদ, লালদিঘীরপাড় হাজী নওয়াব আলী মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আফরোজ মিয়া সহ নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, হকাররা নানা রকমের পণ্য সামগ্রী নিয়ে ফুটপাত ও প্রধান সড়ক দখল করে ব্যবসা করায় জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, নয়াসড়ক, আম্বরখানাসহ বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে সারা বছরে ঈদের সময়ে ভালো ব্যবসা করার আশা করলেও হকারদের কারণে নগরীর ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর শুধু লোকশান গুনেই যাচ্ছেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়েছেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে আসে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। আরেক সাবেক মেয়র ফুটপাত থেকে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের লালদিঘীরপারে জায়গায় দিয়ে তাদের পুনবার্সনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরও অদৃশ্য শক্তির বলে তারা পুণরায় ফিরে এসে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করে। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করে বলেন, এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আর তা না হলে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করতে াধ্য হবে সিলেটের ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের নাগরিকরা।
এবার রমজানের শুরু থেকে ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করার আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সচেতন নাগরিক সমাজ হকার উচ্ছেদের দাবিতে মাঠে নেমেছে। তাদের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যবসায়ীরা।
এদিকে আগামী ৯ মার্চ (রোববার) বেলা আড়াইটায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। স্মারকলিপি প্রদানকালে সিলেটের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখা, সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদ।
Leave a Reply