সিলেটে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের লাগামহীন চাঁদাবাজি : মাসে আয় অর্ধকোটি! | তদন্ত রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
সিলেটে আ.লীগ নেতা বালু আপ্তাব পুলিশের জালে বাগমারা গণিপুরে অধ্যাপক কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩১ দফা গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ নাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০, থমথমে পরিস্থিতি এলাকায়। সিলেট নগরীর আম্বরখানায় যুক্তরাজ্য প্রবাসীর দোকান কোঠা আত্মসাতে ১ জন গ্রেফতার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৩ বিজিবির  সাথে সাংবাদিকের মত বিনিময় সভা রৌমারীতে জামালপুর ব্যাটালিয়নের (৩৫ বিজিবি) অভিযানে আসামীসহ ভারতীয় মদ ও ঔষধ আটক করা প্রসঙ্গে। রেললাইনে পাথরের সঙ্গে ইটের খোয়া আগাছা নয় আমরুল গাছ শত রোগের মহা ঔষুধ দারিদ্র্য জয় করে রাস্তায় ঘাম ঝরানো নারীর সাহস—অটোভ্যান চালিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন সুলতানা! রৌমারীতে ইয়াবা-হেরোইনসহ মাদক সম্রাট নুর আলম আটক
সিলেটে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের লাগামহীন চাঁদাবাজি : মাসে আয় অর্ধকোটি!

সিলেটে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের লাগামহীন চাঁদাবাজি : মাসে আয় অর্ধকোটি!

ট্রাফিক পুলিশ

Manual6 Ad Code

জাবেদ এমরান: বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি পুলিশের পোশাক বদল হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে সরকারের বিভিন্ন দফতরে। জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ম্যারাথন দৌড় খেয়েও ট্রাফিকপুলিশের স্বভাব চরিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

৫ আগস্টের পরে কর্মস্থলে যোগদান করতে ভয় পাওয়া জাতির সেবকরা এখন নির্ভয়ে সড়কে লাগামহীন চাঁদাবাজি করছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন ট্রাফিকপুলিশের ৭জন সদস্যের মাসিক অনৈতিক ইনকাম টাকার অংকে অর্ধ কোটি টাকা। তাদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট বাকিরা টিআই। উপর মহলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এসএমপিতে চাঁদাবাজির দিক থেকে সবাইকে ছাঁড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন এক সার্জেন্ট।

 চাঁদাবাজিতে এওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য সেই গুণধর দুর্নীতির বরপুত্রের নাম সার্জেন্ট প্রকাশ। সিলেট মেট্রোপলিটনের ৬টি সহ ১৭টি থানা এলাকার যানবাহন রিকুইজিশন করার গুরু দায়িত্ব সার্জেন্ট প্রকাশের উপর ন্যস্ত। আর তাতেই তার কপাল খোলে যায়। সিলেটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি কাজের জন্য প্রতিদিন ৫টা নোহা বা মাইক্রোবাস, ১০টা সিএনজি অটোরিকশা ও ৫টা লেগুনা কখনো অন্যান্য যানবাহন রিকুইজিশন করার প্রয়োজন হয়। অথচ দিনে প্রায় শতাধিক যানবাহন আটক করে রিকুইজিশনের নামে চলে চাঁদাবাজি।

ফিটনেসবিহীন প্রতি যানবাহনকে ৭০০ টাকার বিনিময়ে দেয়া হয় রিকুইজিশন স্লিপ। সেই স্লিপ দেখিয়ে চালকরা নির্ঝঞ্ঝাট সড়কে যানবাহন নিয়ে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারেন। স্লিপযুক্ত যানবাহনে করে মাদক, ভারতীয় পণ্যসহ অবৈধ মালামাল পরিবহন হচ্ছে বলে একটি সংস্থা নিশ্চিত করেছে।

রিকুইজিশন চাঁদাবাজি থেকে প্রকাশের দিনে আয় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। মাসে আয়ের পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ১৮ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা। সেখান থেকে ভাগ পান ট্রাফিক অফিসে প্রশাসন শাখায় কর্মরত টিআই শফিক, প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত টিআই সুহেল সহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন। সার্জেন্ট থেকে তেমন একটা পিছিয়ে নেই টিআই মোশাররফ হোসেন। সিলেট শহরের প্রবেশদ্বার দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে মোশাররফের ফেলে রাখা জালে আটকা পড়ছেন সুবিধাভোগীরা।

Manual5 Ad Code

পণ্যবাহী যানবাহন শহরে প্রবেশে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে নির্ধারিত চাঁদা দিয়ে হুমায়ুন রশিদ চত্বর হয়ে নগরীতে ঢুকছে। চত্বর দিয়ে চালিবন্দর পৌঁছলে ট্রাক প্রতি দিতে হয় ৮০০ টাকা, বুরহান উদ্দিন রোডে যাতায়াত করলে ৫০০ টাকা করে নেন মোশাররফ। দিনে ১৫ থেকে ২০টি ট্রাক নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে প্রবেশ করে পণ্য লোড আনলোড করছে। ট্রাক ছাঁড়াও তার সাথে চুক্তির আওতাধীন রয়েছে অনুমোদনহীন শতাধিক টমটম।

Manual7 Ad Code

কদমতলীর বান্দের নিচে চলা টমটম থেকে টমটম লাইনম্যান শাহাদাত ও হানিফের মাধ্যমে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা এবং শিববাড়ী রোডে চলাচলকারী টমটম থেকে লাইনম্যান খলিল ও রেকার ডাইভার রুবেলের মাধ্যমে প্রতিদিন নেন ৫০০ টাকা। ফেঞ্চুগঞ্জ রোডে চলাচলকারী লেগুনা থেকে মাসে ২০ হাজার, বড়গাড়ী থেকে নেন মাসে আরো ২০ হাজার টাকা। সব মিলিয় মোশাররফের মাসে আয় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা।

টিআই আজাদ হোসেন খাঁনের বর্তমান দায়িত্বাধীন এলাকা বন্দর হলেও তিনি পূর্বে দায়িত্বে থাকা কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকার ফুটপাত থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিচ্ছেন। নগরীর কোতোয়ালী থানার সামন থেকে কানিশাইল চলাচলকারী টমটম থেকে তিনি টমটম ম্যানেজার জনি ও ঝুমনের মাধ্যমে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা নেন। কোতোয়ালী থানার ওসির নাম বলে ওসির ডাইভার ও বডিগার্ড দুজনে নেন মাসে ৩০ হাজার টাকা।

সিসিকের সামনের সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিমাসে মাসে ৫ হাজার, মধুবন মার্কেটের সামনের সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে লাইনম্যান রুবেলের মাধ্যমে ৫ হাজার ও কালেক্টর মসজিদের সামনের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে লাইনম্যান শফিকের মাধ্যমে ৫ হাজার। এছাড়াও সেখানের সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে ৫ হাজার, জিতু মিয়ার পয়েন্টে অবস্থিত সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে লাইনম্যান কামরুলের মাধ্যমে মাসে ৩ হাজার, জেল রোর্ডের মুখের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসছেন টিআই আজাদ। বন্দর, জিন্দাবাজার ও জেলা পরিষদ এলাকার ফুটপাতও তার চুক্তির আওতাধীন রয়েছে।

সিলেটের পাইকারি বাজার কালিঘাটে সকাল ৮টার পর যে সমস্ত ট্রাক অবস্থান করে সেসব ট্রাক চালকরা ট্রাক প্রতি ২শত টাকা করে টিআই আজাদকে দিতে হয়। পূর্বে তিনি হুমায়ুন চত্বরে দায়িত্বপালন করায় সেখানে তার সাথে চুক্তিকৃত অনটেশ সিএনজি ও ফুটপাতের কিছু দোকান থেকে এখনও মাসোয়ারা আদায় করছেন। তার মাসে অনৈতিক আয় আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা।

সম্প্রতি র‍্যাবে বদলি হওয়া টিআই রুহুল আমিন পলাশ হোটেলের সামন থেকে এয়ারপোর্ট রোডে চলাচলকারী টমটম থেকে লাইনম্যান আনোয়ারের মাধ্যমে মাসে নিতেন ৫০ হাজার টাকা। আম্বরখানায় নগরীর একমাত্র বৈধ স্ট্যান্ডে ১০টি সিএনজি অটোরিকশা অবস্থানের অনুমোদন থাকলেও শতাধিক সিএনজি স্ট্যান্ডে রয়েছে।

 সেখানের তিনটি সিএনজি স্ট্যান্ড মাসিক চুক্তিতে চলছে। তাছাড়া রুহুল আমিনের আওতাধীন এলাকায় চলাচলকারী অনটেশ সিএনজি থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা, আম্বরখানা বড়বাজারের মুখ থেকে খাস্তবির রোডে চলাচলকারী ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আটক করে দিনে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করতেন। যে সব রিকশা চালক চাহিদার ৫শত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তার রিকশা রেকার হতো।

বারুদে ট্রাফিকপুলিশের অনৈতিক খবর গত সংখ্যায় প্রকাশের পর রুহুল আমিনকে আম্বরখানা থেকে নাইওরপুল ও শিবগঞ্জে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়েও টিলাগড় পয়েন্ট থেকে বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী টমটম, লেগুনা ও সিএনজি শ্রমিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আদায় করেন মাসোয়ারা। তিনি র‍্যাবে বদলি হওয়ার পূর্বে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন।

টিআই মোহাম্মদ নুরে আলমের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা দক্ষিণ সুরমা। সিলেটে সবচেয়ে বেশি অনটেশ ও ডাবল নাম্বার প্লেটের সিএনজি চলাচল করে এই রোডে। সিএনজি শ্রমিকনেতা আলতাফ ও ওয়ারিসের মাধ্যমে চলা অনটেশ সিএনজি থেকে তিনি ২০ হাজার টাকা মাসোহারা পান। এছাড়াও ক্বিনব্রীজের মুখের বাসস্ট্যান্ড ও তিনটি সিএনজি স্ট্যান্ড এবং টমটম স্ট্যান্ড ছাঁড়াও বাবনা পয়েন্ট, রেলগেইট পয়েন্ট, মার্কাজ পয়েন্ট, কাজিরবাজার দক্ষিণ প্রান্ত, জিঞ্জির শাহ এলাকা ও চন্ডিপুল পয়েন্টের সিএনজি স্ট্যান্ডের সাথেও তার মাসিক চুক্তি রয়েছে। ধারণা করা হয় সব মিলিয়ে তার মাসে অনৈতিক আয় ২ লক্ষ টাকা। টিআই শফিক পূর্বে দীর্ঘদিন সার্জেন্ট হিসেবে এসএমপিতে চাকরি করেন।

 বর্তমানে টিআই হয়ে পুনরায় এসএমপিতে যোগদান করে অদৃশ শক্তিবলে দক্ষ টিআইদের পেছনে ফেলে ট্রাফিক অফিসের টিআই প্রশাসনের চেয়ার দখল করেন। সড়কে ইনকামের ভালো ধারণা থাকায় মাঠে থাকা অফিসাররা তাকে বড় অংকের ভাগ দিতে হয় বলে কয়েকজন অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।

তবে ভাগ থেকে নিরাশ হন না প্রসিকিউশন শাখার টিআই সুহেলও। পাশাপাশি সুহেল বিভিন্ন যানবাহনের ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র আটক রেখে মালিক পক্ষের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে বিভিন্ন পরিমানে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। তার মাসে আয় ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা। গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে টিআই শফিক, সুহেল ও মোশাররফকে একসাথে হুমায়ুন রশিদ চত্বর এলাকায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে দেখা যায়।

Manual3 Ad Code

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে; তারা সিএনজি শ্রমিকনেতা আলতাফ ও ওয়ারিসকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। ৫ আগস্টের পর কয়েকটি সিএনজি স্ট্যান্ডের ধার্যকৃত মাসোহারা পূর্বের ন্যায় ট্রাফিক অফিসে না যাওয়ার বিষয়ে কথা হয় বলে মনে করা হচ্ছে।

তথ্যসুত্র: সাপ্তাহিক বাংলার বারুদ।

Manual5 Ad Code

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code
error: Content is protected !!