সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনির হোসেন। নানান বির্তকিত ঘটনায় ঘুরেফিরেই দফায় দফায় তিনি একাধিকবার এসেছেন মিডিয়ার আলোচনায়। ওসির বিরুদ্ধে তামাবিল মহাসড়ক হয়ে সিলেটে চোরাচালান মালামাল নিরাপদে পৌঁছে দিতে চোরাকারবারিদের সহযোগী হিসেবে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে নিত্যদিনের। পূর্বে এসব তথ্য তুলে ধরে ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। এতে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে সমাজে তাকে হেওপ্রতিপন্ন করে ওসি তার ক্ষোভের আগুন নিভানোর অপচেষ্টা চালান। সব মিলিয়ে বেশ আলোচিত-সমালোচিত এই ওসি ঘুরেফিরে ফের আসলেন মিডিয়ার আলোচনায়।
জানা গেছে- সিলেটের ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালিয়ে কর্তণপূর্বক টিলার মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ২টি টেট্রার গাড়ি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এই ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে ওসি মোঃ মনির হোসেন বিরুদ্ধে। এদিকে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাহপরান (রহ.) থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মোঃ আবু সুফিয়ান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এই অভিযোগ ওসি আমলে না নিতে শুরু করেন এক নাটকীয়তা বলে অভিযোগ পরিবেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
থানায় দাখিলকৃত অভিযোগের সুত্রমতে, ৪নং খাদিমপাড়াস্থ ৫নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত নোয়াগাঁও এলাকার জামাল মিয়া ও রশিদ মিয়ার বাড়িতে টিলা কর্তণ হচ্ছে মর্মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টিলা কর্তণপূর্বক টিলার মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ২টি টেট্রার গাড়ি আটক করেন।
এ সময় জব্দকৃত ২টি টেট্রারের চাবি পরিবেশ অধিদপ্তরের হেফাজতে নেওয়ার উদ্দেশ্যে চাবি জব্দ করা হলে ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য তাইজুল ইসলাম টেট্রারের চাবি ছিনিয়ে নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক মোঃ আবু সুফিয়ান ও গাড়ি চালক মিজান আহমদকে শারিরীকভাবে আঘাত করে জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে নেন এবং জব্দকৃত ২টি টেট্রারকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সহযোগিতা করেন। এমনকি ইউপি সদস্য তাইজুল ইসলাম অভিযানিক দলের উপর আক্রমণ করতে টিলা কর্তণে নিয়োজিত শ্রমিকদের প্ররোচিত করেন। ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামসহ তার অপরাপর সহযোগিদের এমন আচরণে নিরুপায় হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ বদরুল হুদা পরিবেশ অধিদপ্তরের গাড়িতে আশ্রয় নিলে ইউপি সদস্য তাইজুল ইসলাম সরকারি গাড়ি ভাংচুরের হুমকি দেন। ইউপি সদস্য তাইজুল ইসলামের নেতৃত্বে তার অপরাপর সহযোগীদের এমন কর্মকান্ডে মোবাইল কোর্টের টিম নিরাপদে থাকতে সিলেট তামাবিল মহাসড়কে অবস্থান করেন।
পরবর্তী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশের সহায়তায় মোবাইল কোর্টের টিম ফের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ইউপি সদস্য তাইজুল ইসলাম সহ তার অপরাপর সহযোগীরা পালিয়ে যান।
এদিকে, তাজুল ইসলাম স্থানীয় ইউপি সদস্য হয়েও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টিলা কর্তণ এবং টিলা কর্তণের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মারধর করে কর্তণপূর্বক টিলার মাটি পরিবহনে নিয়োজিত ২টি টেট্রার গাড়ি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে সরাসরি সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের এমন নেক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সিলেটের পরিবেশবিদরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামের ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি টিলা কর্তনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- মাদ্রাসার কাজের জন্য টিলা কাটা হচ্ছে। টিলা কাটার বিষয়টি ইউএনও সহ চেয়ারম্যান সাহেবের নলেজে আছে। হামলা ও আঘাত করে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এখানে তেমন কিছু হয়নি তবে প্রথমে আমি উনাদের চিনতে পারি নি সিভিলে থাকার কারণে পরবর্তী পুলিশ আসায় আমি নিশ্চিত হয়েছি উনারা পরিবেশ অধিদপ্তরের লোক।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ২০ মিনিটে শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনির হোসেন এর সরকারি সেলফোন যোগাযোগ করলে তিনি জানান- অভিযোগ এখনও হাতে আসে নি তবে আসবে বলেও তিনি আমাদের নিশ্চিত করেন কিন্তু পরের দিন মামলার সত্যতা নিশ্চিতের জন্য দফায় দফায় যোগাযোগ করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেনি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ বদরুল হুদা অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান- বাদি ঘটনার পর পরই একই দিন বিকাল ৪টার ভিতরে অভিযোগ দাখিল করেন শাহপরান (রহ.) থানায়। পরবর্তীতে ওসি অফিস কর্তৃক ফরোয়ার্ডিং করে অভিযোগ জমা দিতে জানালে পূনরায় একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাদি নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে কেনও জানি ওসি মামলা নিতে চাচ্ছেন বিধায় ওসি একেক সময় একেক ধরনের অজুহাতে দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা কিংবা বিষয়টি ঠান্ডা করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
Leave a Reply