গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর দখল-দারিত্বের দায় চাপিয়ে নিজেকে আড়াল করেন ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তী। বিক্রি করা বাগানের ভুমিতে ইতিমধ্যে বসতি গড়ে ওঠেছে। কোথাও নির্মিত হয়েছে ইমারত। কিছু কিছু স্থান যথারীতি আবাসিক এলাকায় রূপ নিয়েছে। অথচ চা বাগানের ভূমি রক্ষায় ইতিমধ্যে আদালত থেকে নামে মাত্র একটি কমিটি হলেও সেই বাগানের ব্যবস্থাপক কমিটিকে ঘুমের ঘরে রেখে নিজেই ভূমি বিক্রি করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামাচ্ছেন রিংকু চক্রবর্তী। সরেজমিন দেখা যায়, তারাপুর চা বাগানে অনেকেই নির্মাণ করেছেন বসতি। কেউ কেউ আবার বাগানের লাগুয়া পাকাঘর দিয়ে দোকান কোটা এমন কী স্থায়ীভাবে মার্কেট তৈরী করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়ায় দখল হারান রাগিব আলী। আদালত থেকে বাগানের দায়িত্ব পান সেবায়েত পঙ্কজ দাস। কিন্তু রাগির আলী কারাগার থেকে বেরিয়ে রিভিউ করার পর পঙ্কজকে বাদ দিয়ে সেবায়েত পরিবারের একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে রেখে আদালত থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে রয়েছেন জেলা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন দফতরের একজন করে প্রতিনিধি। কিন্তু কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একাই অর্থ উপার্জনের লোভে নামমাত্র মূল্যে দখলদারিত্ব চা বাগানের ভূমি বিক্রি করে আসছেন বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী। বাগানের ভূমি বিক্রি করায় বেহাত হয়েছে তারাপুর চা বাগানের সাড়ে ৩শ’ একরভূমি।
গত বুধবার কমিটির সদস্যরা বাগানে সরেমজিন পরিদর্শনে যান। কিন্তু পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে চা পাতা উপহার দিয়ে বিদায় করেন বাগান ব্যবস্থাপক। ব্যবস্থাপক রিকু চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানান, তারাপুর চা বাগানের ৫শ’ একর জমির মধ্যে ১৩০ একর ধরে রাখতে পারছি। বাকি সব অবৈধ দখলে আছে। ইতিমপূর্বে জেলা প্রশাসক উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরে দখল হয়ে যায়। তিনি বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না, তবে আত্মরক্ষার জন্য আমরা এখানে শ্রমিকদের ঘর বানিয়ে দিই। মেডিক্যাল কলেজের সামনে ২০টি দোকান আছে। তবে দেবোত্তর সম্পতির উপর স্থাপনা সবই অবৈধ। কাগজে-কলমে ৩২৩.৮ একরের মধ্যে ১৩০ একর বাগানের দখলে আছে। নিজে জায়গা বিক্রি করলেও মৌখিকভাবে কাউকে বসান না বলে দাবি করেন তিনি। অথচ তার লিখিত কাগজেই বসতি গড়েছেন অনেকে।
বাসিন্দারা জানান, তারা বাগান ম্যানেজারের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমানে নগদ টাকা দিয়ে জমি কিনে ঘর-বাড়ি তৈরী করেছেন। কেউ কেউ বলেন, টাকা দিয়ে তারা ৯০ বছরের জন্য বাগানের জায়গা ইজারা নিয়ে বাড়ি তৈরী করেছেন। তাদের অনেকে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে বলেন, বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তীর কাছ থেকে নগদ অর্থে ভূমির মালিক হয়েছেন। এসব ভূমি বিক্রি করতে অনেকে সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মন্দির ও চা বাগানের শ্রমিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে তারাপুর চা বাগানের টিলা কেটে দোকান কোটা নির্মাণ করে ভাড়া দেন রিংকু চক্রবর্তী। স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক দাপুটে কাউন্সিলর জগদীশ দাসকে হাত করে নিজে লাভবান হন রিংকু। স্থানীয় করের পাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় শিমুল ঘোষের কাছে জেএল-৭৬, খতিয়ান-১৭, দাগ নং-৯৭ দাগের ৫০ ফুট ও ২০ ফুটের দোকান কোটা বাবদ ৫ লাখ টাকা নেন ম্যানেজার রিংকু। এখানে সাক্ষি রাখেন স্থানীয় কাউন্সিলর জগদীশ দাসকেও। ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন রিংকু।
জানা গেছে, দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়ার কারণে রাগীব আলীর হাত ছাড়া হয় তারাপুর চা বাগান। আদালত থেকে বাগানটির দায়িত্ব পান সেবায়েত পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি বাগানটি চালাতে ব্যর্থ হন। এখন কমিটি পরিচালনা করছে বাগান। যে কারণে অর্থ সংকটে জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে বাগানের সব কার্যক্রম। আর ঢিলেঢালা মালিকানার কারণে বাগান হয়েছে বিবর্ণ। এতোদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের চোখ বাগানের চারদিক দখল করলেও এবার ম্যানেজার নিজেই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আর চা শ্রমিকদের কল্যাণ ও মন্দিরের নামে বাগানের জায়গা বিক্রি ও টিলা কেটে দোকানকোটা নির্মাণে সরাসরি জড়িত বাগান ব্যবস্থাপক রিকু চক্রবর্তী।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাগীব আলীর দখল থেকে হাজার কোটি টাকার তারাপুর চা বাগান উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। উদ্ধারের পর সাড়ে ৫০০ একর এলাকাজুড়ে থাকা চা বাগানটির দখল সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। হাজার কোটি টাকার এই সম্পত্তি দীর্ঘদিন রাগীব আলীর দখলে ছিল। তারাপুর চা বাগান নিয়ে আদালত থেকে মামলার রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবায়েতের হাতে বাগানের জমি তুলে দেওয়া হয়। গত ৮ বছর ধরে চা বাগানটি প্রশাসনের দায়িত্বে থাকলেও তারাপুর চা বাগানের জমি দখল ও বিক্রির হিড়িক চলছে।
দখল ও বিক্রি হওয়া চা বাগানের জমি উদ্ধারে কি সক্রিয়ভাবে মাঠে নামবে প্রশাসন। উল্লেখ্য, গত কয়েকমাস আগে দোকান কোটা বন্ধে এবং অবৈধ সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।ব্যবস্থাপক কমিটি ঘুমের ঘরেব্যবস্থাপক কমিটি ঘুমের ঘ
Leave a Reply