সিলেটে ওসি মনিরকে ঘিরে গুঞ্জন

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ন

জাতীয় সাপ্তাহিক তদন্ত রিপোর্ট পত্রিকায় সারাদেশে জেলা/উপজেলায় প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা জীবন বৃত্তান্ত পাঠান ই-মেইলে:- tadantareport1992@gmail.com কিংবা যোগাযোগ:- +8801719-194493।

জাতীয় সাপ্তাহিক তদন্ত রিপোর্ট পত্রিকায় সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে।

সিলেটে ওসি মনিরকে ঘিরে গুঞ্জন

সিলেটে ওসি মনিরকে ঘিরে গুঞ্জন

সিলেটে ওসি মনিরকে ঘিরে গুঞ্জন
সিলেটে ওসি মনিরকে ঘিরে গুঞ্জন

তদন্ত রিপোর্ট প্রতিবেদক: সিলেটের মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনির হোসেন। তিনি একের পর এক বহুমাত্রিক কর্মকান্ডে বির্তকিত হচ্ছেন। ঘুরেফিরেই তাকে নিয়ে সর্বমহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যেসব কারণে সিলেটে ওসি মনিরকে ঘিরে নানা গুঞ্জন।

টাকা মিলবে কাঁড়ি কাঁড়ি যদি ছাড়েন চিনির গাড়ি। আসলে কথাটা শুনে হয়তো যে কেউ চমকে উঠতে পারেন তবে পিছনে রয়েছে অজানা বহু গল্প। সিলেট সীমান্তে যখন চোরাই চিনির রমরমা কারবার, তখন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ বিভাগের একটি থানা এলাকায় শুরু হয়েছে চোরাই চিনির গাড়ি (ট্রাক, মিনি ট্রাক) ছাড় দেওয়ার আরেক কারবার। প্রশাসনের এমন কর্মকার্ডে চিনি চোরাচালান কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই বিপুল অর্থের ভারতীয় চোরাই চিনি ঢুকছে অবাধে। চিনি চোরাচালানে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চোরাই চিনির গাড়ি ছাড় দিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামানোর অভিযোগের তীর ওসি মনিরের দিকে।

পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা) এর সার্বিক সহযোগিতায় এসআই সানাউল ইসলাম শাহপরান পুলিশ ফাঁড়ির আইসি হিসেবে যোগদান করেই আটকাতে শুরু করেন তামাবিল মহাসড়ক দিয়ে আসা ভারতীয় চিনির চালান। আইসি সানাউল ইসলামের ধারাবাহিক চিনি আটকের ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার পাশাপাশি সুনাম কুড়াচ্ছে শাহপরান (রহ.) থানা পুলিশ। এ আইসি আসার আগে ওসি মনির কেনও পারেন নি চিনির চালান আটক করতে কিংবা মামলা দিতে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। আইসি এসব চোরাই চিনির ট্রাক আটক করলে মালের প্রকৃত মালিকের নাম মামলায় আসামি না করে বহনে থাকা ট্রাকের চালক ও হেলপারকে মালের মালিক সাজিয়ে মামলা নেন ওসি।

২০২৪ সালের শনিবার (৯ নভেম্বর) গোপন সংবাদে বাইপাসে অভিযানে নামেন আইসি সানাউল। তখন আইসি সানাউলভেবে পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন কনস্টবলকে তুলে নিয়ে মারধর করে চোরাকারবারিরা। পরবর্তীতে ওই কনস্টেবলকে মোগলাবাজার থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হলে ওসি মনির চোরাকারবারিদের রক্ষার কবজ হয়ে আহত ওই কনস্টেবলকে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বিধায় চুপ থাকতে নির্দেশনা দেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্য জানান।

অভিযোগ প্রকাশ, শাহপরান (রহ.) থানাধীন এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালিয়ে কর্তণপূর্বক টিলার মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত ২টি টেট্রার গাড়ি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছিলো ওসি মোঃ মনির হোসেন বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিগত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাহপরান (রহ.) থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মোঃ আবু সুফিয়ান।

কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওসি তখন অভিযোগ আমলে না নিতে শুরু করেন নানান নাটকীয় তালবাহানা বলে সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক মোঃ বদরুল হুদা। তখন তিনি অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন- বাদি ঘটনার পর পরই একই দিন বিকাল ৪টার ভিতরে অভিযোগ দাখিল করলে ওসি অফিস কর্তৃক ফরোয়ার্ডিং করে অভিযোগ জমা দিতে জানান। এরপর একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাদি নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে কেনও জানি ওসি মামলা নিতে চাচ্ছেন না বিধায় ওসি একেক সময় একেক ধরনের অজুহাতে দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা কিংবা বিষয়টি ঠান্ডা করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, যাহার কল রেকর্ড সংগ্রহকৃত।

এ ঘটনায় সিলেটের মিডিয়াঙ্গনে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হলে ওসি বেকায়দায় পরে পরিবেশ আইনে একটি মামলা ও সরকারি কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা রেকর্ড করেন। জোড়া মামলা রেকর্ড হলেও জোড়া মামলার আসামি ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য তাজুল ইসলামকে প্রকাশ্য ইউনিয়ন অফিসে যাতায়াত করাসহ একই থানাধীন মামার দোকান সাকিনস্থ হাতিমাড়া ব্রিজের পাশে সরকারিভাবে রেশনের মালামাল বন্টন করতেও দেখা গেছে, যাহার ভিডিও ডকুমেন্টসও সংগ্রহকৃত।

কি এমন অদৃশ্য কারণে জোড়া মামলা আসামি ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করছেন না ওসি। সচেতন মহলের কেউ কেউ বলছেন জোড়া মামলার আসামি এই ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার না করতে ওসি বড় অংকের রফাদফায় বিক্রি বলে অভিযোগ তাদের। ওসি মনির হোসেনের এরূপ কর্মকান্ডে বিগত ৫ আগষ্টের পর আবার নতুন করে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে আমজনতার নিকট।

এদিকে, সরকারি কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনায় নিলেন না মামলা আবার সাংবাদিকদের লেখালেখি থেকে রেহাই পেতে মামলা নিলেও রফাদফায় জোড়া মামলার আসামি ইউপি সদস্য তাজুলকে আটক করছেন না ওসি। এমন অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আরেকটি বির্তকিত ঘটনায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে ওসি মনিরকে ঘিরে।

সুত্রমতে, ২০২৪ সালের (২১ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪ ঘটিকায় জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার হইতে ড-১১-০২২৯ নাম্বারের একটি ট্রাক ১৫০ বস্তা ভারতীয় চোরাই চিনি বোঝাই করে সিলেটের কালিঘাট নিয়ে যাওয়ার পথে সিলেট তামাবিল মহাসড়ক সাকিনস্থ সুরমাগেইট পয়েন্টে সিলেটগামী ঢাকা মেট্রো-গ-১২-১৩৭৯ নাম্বারের একটি প্রাইভেটকারকে পিছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকসরটি ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে প্রাইভেটকার যায় এবং চিনি বোঝাই ট্রাকটিও ঘটনাস্থলে উল্টে গেলে রাস্তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে ট্রাকে থাকা ১৫০টি চিনির বস্তা। তবে তাৎক্ষণিক চোরাচালানের চিনি বহনকারী ট্রাক চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে শাহপরান থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাইভেটকার চালকসহ আহত অবস্থায় দুজনকে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন।

চোরাকারবারিদের সঙ্গে ওসি মনিরের গভীর দহরম-মহরম থাকায় ওসি ডিউটির পুলিশ দিয়ে সকাল হওয়ার আগেই সড়ক থেকে ১৫০ বস্তুা চোরাই চিনি ও ট্রাকটিসহ প্রাইভেটকারটি থানায় নিয়ে যান। চিকিৎসা শেষে কার চালক বাড়িতে ফিরলেও আহত অপরজন ওসমানী হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন।

এখানেই থেমে নেই ‘কারো নুন খেলে যে তার গুণ গেতেই হবে’ তার জলন্ত প্রমাণ দিলেন ওসি মনির। চোরাকারবারিদের সঙ্গে বিশাল রফাদফায় ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসি মনির প্রাইভেটকারটির মালিকের অজান্তেই প্রাইভটকার চালককে তার বাড়িতে থেকে লোক মারফতে থানায় ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক তাকে বাধ্য করেন ওসির মনমর্জি তৈরি করা একটি আপোষনামায় স্বাক্ষর করতে। এ আপোষনামার ভিত্তিতে ট্রাকটি থানা থেকে ওসি ছেড়ে দিলেও প্রাইভেটকারটি এখনও থানা হেফাজতে রয়েছে।

উক্ত আপোষনামায় জৈন্তাপুর থানাধীন ঘাটেরচটি এলাকার মোঃ আরব আলীর পুত্র মোঃ রকিব আলীকে ট্রাকের মালিক দেখানো হলেও আদৌও ট্রাকটির সঠিক মালিক তিনি কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে তবে ট্রাক ভর্তি ১৫০ বস্তুা ভারতীয় চোরাই চিনির প্রকৃত মালিক তিনি বলে থানা পুলিশের একটি বিশস্ত সুত্র নাম না প্রকাশের শর্তে জানায়। উক্ত দূর্ঘটনার ছবি ও ভিডিওসহ আপোষনামার কপি সংগ্রহকৃত রয়েছে।

ঘটনাটির নিশ্চিত করে প্রাইভেটকারটি মালিক জানান- তার মামলার প্রস্তুতি চলমান। ওসি রফাদফায় ট্রাকটি ছেড়ে দিয়ে আমার কারটি থানায় আটকে রেখেছেন। কিন্তু ওসি দূর্ঘটনার ঘটনায় মামলা না নিলেও চোরাই চিনি বহনের অপরাধে ট্রাকটির বিরুদ্ধে ত মামলা নিতে পারতেন, অদৃশ্য কোন কারণে ওসি তা করেন নি। এখন বিভিন্ন লোক মারফতে জানতে পারলাম আমার প্রাইভেটকাটির ভিতরেই না কি ভারতীয় চোরাই চিনির ১৫০টি বস্তুা ছিলো বলে ওসির সন্দেহ হচ্ছে বিধায় তিনি কারটি আটকে রেখেছেন।

জানা গেছে- পূর্বে ওসি চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে জড়িতসহ তার বহুমাত্রিক অপকর্মের তথ্য তুলে ধরে ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। এতেই ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে ওই সংবাদিকের বিরুদ্ধে তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে সমাজে তাকে হেওপ্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে ওসি তার মনের ভিতরে জমাটবদ্ধ ক্ষোভের আগুন নিভানোর অপচেষ্টা চালিয়েও ছিলেন বলে জানা যায়। সব মিলিয়ে বেশ আলোচিত-সমালোচিত এই ওসি ঘুরেফিরে একের পর এক বহুমাত্রিক কর্মকান্ডে রয়েছেন মিডিয়াঙ্গন জুড়ে আলোচনায়।

এসব বিষয়ে শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনির হোসেন এর ব্যবহৃত সরকারি সেলফোনে যোগাযোগ করলে জানা যায় তিনি ছুটিতে গেছেন বিধায় সংবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে তার বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo
error: Content is protected !!