তদন্ত রিপোর্ট ডেস্ক: ওসির সহযোগিতায় জলমহালের ১৫ লাখ টাকার মাছ লুণ্ঠনের অভিযোগ করেছেন এক ভোক্তভোগী।
অভিযুক্ত ওসি মো. সজীব রহমান, তিনি সুনামগঞ্জের হাওর সীমান্ত জনপদ খ্যাত মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।
ভোক্তভোগীর সাইদুর রহমান, তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের প্রয়াত হাছন আলীর পুত্র।
গত বুধবার (৫ মার্চ) জলমহালের মাছ লুণ্ঠনের ঘটনায় থানার ওসি ও এসআইসহ ১৭ জনের নামে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ববাররে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন সাইদুর রহমান।
অভিযোগে উল্লেখ্য- চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি মধ্যনগর থানার ওসির লালিত দুগনই গ্রামের ১২ থেকে ১৪ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গোড়াডুবা জলমহাল দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাইদুর রহমানের নিকট ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।
তখন চাঁদা দাবির বিষয়টি প্রথমে মধ্যনগর থানার ওসিকে জানানোর পর কার্যতকোন আইনি পদক্ষেপ নিতে নিরুৎসাহিত করেন ভোক্তভোগী সাইদুর রহমানকে।
ভোক্তভোগী পরবর্তীতে গত (৩০ জানুয়ারি) পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ করলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসিকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। ডিবির ওসি তদন্তের নামে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন।
গেল ১১ ফেব্রুয়ারি একই চক্রের ওসির লালিত ২৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে জলমহালের খলায় এসে থানার এসআই আসাদকে সাথে করে নিয়ে ফের চাঁদা দাবি করে ২০ হাজার টাকা মুল্যের আসবাবপত্র জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এসময় থানার এসআই আসাদ জলমহালে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন।
পরদিন (১২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজীব রহমান সাইদুরকে থানায় ডেকে নিয়ে ওসির কক্ষে বসিয়ে রেখে হুমকি-ধামকি দিয়ে মধ্যনগরের বিএনপি নেতা কামাউড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাসারের নিকট গোড়াডুবা জলমহালটি বিক্রির জন্য প্রস্তাব, নানামুখী চাঁপ সৃষ্টি করেন। ওই সময় ওসির কক্ষে বিএনপি নেতা আবুল বাসার উপস্থিত ছিলেন। ওসির ওই প্রস্তাবে সাইদুর রাজি না হওয়ায় ওসি অশালীন ভাষায় সাইদুরকে গালিগালাজ করে হুমকি-ধামকি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।
ওসির প্রস্তাবে জলমহাল বিক্রিতে রাজী না হওয়ায় ওসির পরোক্ষ- প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মধ্যনগরের জমশেরপুর গ্রাম সংলগ্ন গোড়াডুবা জলমহালের অভয়াশ্রমের ভেতর গেল ৩ মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় বিএনপি নেতা বাসারের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জলমহালের খলায় থাকা টিভি, সোলার প্যানেল, ট্রলারে থাকা ইঞ্জিন চালিত কয়েকটি শ্যালো মেশিনসহ ১ লাখ ৫২ হাজার টাকার মালামাল লুণ্ঠন করে নেয়। ওই রাতে তিনটি সেচ মেশিনে জলমহালের পানি সেচে থানার ওসি সজীব রহমান, এসআই আসাদের সহযোগিতায় বিএনপি নেতা আবুল বাসার চক্র জলমহাল থেকে বীরদর্পে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ লুণ্ঠনের অভিযোগ করেন ভোক্তভোগী সাইদুর রহমান।
গত বুধবার রাতে সাইদুর রহমান আরো জানান, মধ্যনগরের গোড়াডুবা জলমহালের যে অংশ থেকে মাছ লুটে নেয়া হয়েছে সেটি ৬ বছরের জন্য বৈধ ভাবে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেয়া হয়েছে। ওসির প্রস্তাবে জলমহাল বিক্রি না করায় মধ্যনগর থানার ওসি এবং এসআই’র লালিত উপজেলা বিএনপি নেতা আবুল বাসারের নেতৃত্বে জলমহালের ১৫ লাখ টাকার মাছসহ দেড় লাখ অধিক মুল্যের আসবাবপত্র লুটে লুণ্ঠন হলেও থানার ওসিসহ থানা পুলিশ ছিলেন নিরব দর্শক।
মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক আবুল বাসার গণমাধ্যমে জানান- তিনি জলমহাল লুণ্ঠনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিক্তিহীন।
গত বুধবার মধ্যনগর থানার এসআই আসাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমে জানান- অভিযোগ থাকায় ওসি স্যারের নির্দেশে থানার ফোর্স নিয়ে আমি জলমহালে যাই, আমার চাকুরি প্রায়ই শেষ সময়, আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সত্য না।
মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজীব রহমান গণমাধ্যমে জানান- তিনি জলমহাল বিক্রির ক্ষেত্রে কাউকে কোন প্রকার চাঁপ-প্রয়োগ করেননি, তার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসপি তাপস রঞ্জন ঘোষ গণমাধ্যমে জানান- মধ্যনগরে জলমহাল লুণ্ঠনের অভিযোগে পেয়েছি, থানার ওসিসহ পুলিশের কেউ লুটেরাদের সহযোগিতায় জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply