বিশেষ প্রতিবেদক: সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনার মামলায় গ্রেফতারের পর মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে জামিনে মুক্ত হলেন বহুল আলোচিত সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের (চট্ট-৭০৭) সভাপতি জাকারিয়া আহমদ। মঙ্গলবার আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে জাকারিয়া আহমদের বিরুদ্ধে ৬ টি মামলা রয়েছে। এর আগে সোমবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জাকারিয়া আহমদকে তার মদিনা মার্কেটস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
অদ্য মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেন। অপরদিকে আসামির আইনজীবি জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে জাকারিয়াকে গ্রেফতারের পর আদালতে প্রেরণ করা হলে সেখানে জড়ো হন তার অনুসারীরা। সেই সাথে আসেন পরিবহন নেতারা। তারা আদালত প্রাঙ্গনে এসে জাকারিয়ার মুক্তির দাবী করেন। এসয় সেই পুরনো হুমকি শুরু করেন শ্রমিকরা। তারা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে জাকারিয়ার মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এসময় অবদান রাখেন সিলেট জেলা শ্রমিক দলের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আলী আকবর রাজন।
একটি সুত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি ঘোলাটে করে জাকারিয়াকে জামিন দিতে বাধ্য করানো হয়। আর আদালতে জাকারিয়ার বিপক্ষে কোন আইনজীবিকে দেখা যায়নি! বরং জামায়াত বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন আইনজীবি সেখানে দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। আদালত সুত্রে জানা যায়, জাকারিয়ার জামিনের পিছনে বিএনপিপন্থী নেতার হাত রয়েছে। বিএনপি নেতা বললেন মিথ্যা মামলা!
জাকারিয়া আহমদকে গ্রেফতারের বিষয়টি মিথ্যা মামলা আখ্যায়িত করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল সিলেট জেলার যুগ্ম আহবায়ক, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক, পরিবহন নেতা মো. আলী আকবর রাজন বলেন, আমাদের অত্তন্ত প্রিয়ভাজন জাকারিয়া ভাইকে গতকালকে রাতে সম্পূর্নভাবে এক মিথ্যা মামলায় আটক করে নিয়ে আসে প্রশাসন। রাজনীতি যারতার, আমরা সবাই বলি শ্রমিকসব এককাতার। এই শ্রমিকের স্বার্থে উনি হয়তবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর পাশে গিয়েছিলেন শ্রমিকের স্বার্থে। ওনার ব্যক্তিগত কোনো পারিবারিক সমস্যা বা জায়গা সম্পত্তির সমস্যার জন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতার পাশে যান নাই। উনি কোনো শ্রমিকের হয়তবা কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা বা দাবি পুরনের জন্য কোনো প্রস্তাবের জন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশে যেতে পারেন।
আমরা এটা জানি না, আমরা একটাই জানি, যে আমরা পরিবহন সেক্টরের যারা আছি আমরা মেহনতি শ্রমিক, এই শ্রমিকের দাবি আদায়ে আমাদের নেতা আজকে সম্পূর্নভাবে আদালত আজকে জামিন দিয়েছে। তিনি হয়তো জেনেও না জানার ভাব নিয়েছেন ওই সময়ে। মরহুম সিসিক মেয়র বদরউদ্দিন কামরান সাহেবের এবং পলাতক আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাহেবের জন্য ভোট চেয়ে নির্বাচনি প্রচারণা করেন জাকারিয়া।
নিজের অফিসে আওয়াী লীগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পলাতক শেখ হাসিনার ছবি রেখেছেন এবং ঘরের সিটিং রুমে সাটিয়ে রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও পলাতক শেখ হাসিনার ছবি! পলাতক সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের জন্য ভোট চেয়েছেন জাকারিয়া। এছাড়াও ৪ নং খাদিম পাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম বিলালের নির্বাচনি প্রচারণা সভায় গিয়ে ভোট চান জাকারিয়া।
এদিকে জাকারিয়া সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে এখনও বহাল রয়েছেন। তার ফেসবুকে এখনও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ছবি শোভা পাচ্ছে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দিবসে দেয়া বানী রয়েছে তার ফেসবুক ওয়ালে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জিয়াউল হক গণমাধ্যমে জানান, চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দায়ের হওয়া পাঁচটি হত্যা ও নাশকতা মামলার আসামি জাকারিয়া। আরও একটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
Leave a Reply