ওসমানীনগর সংবাদদাতা: সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর ওসমানীনগর উপজেলায় সরকারিভাবে বালু উত্তোলনের কোন নির্দেশনা নেই। কিন্তু সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ওসমানীনগর উপজেলার অংশ থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগে একটি ড্রেজার মেশিন ও দুটি নৌকা আটক করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ড্রেজার মেশিন ও নৌকা আটক করা হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বালু উত্তোলনকারী ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের সুত্রমতে, তারা নিয়মতান্ত্রিক নিদৃষ্ট সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছেন। সরকারি ভাবে অনুমোদন নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার তাজাবাদ জেল নং ২১৯ দাগ নং ১হাজার৩ ও দীঘল ভাগ জেল নং২৭ ও ০৮/২৫ দাগে বালু উত্তোলনের সঠিক কাগজপত্র রয়েছে এবং নির্ধারিত সীমানায় বালু উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। নির্ধারিত স্থানে বালু উত্তোলন করলেও কয়েকজন এসে নৌকা ড্রেজার আটক করে। রবিবার প্রশাসন জরিপ করে দেখবেন কোন অংশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিষ্ঠানটি নবীগঞ্জ উপজেলার ইজারা যদিও থাকে তবুও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কুশিয়ারা নদীর ওসমানীনগর অংশ থেকে বালু উত্তোলন করছেন। যে নৌকা এবং ড্রেজার মেশিন আটক করা হয়েছে তা ওসমানীনগর উপজেলার লামা তাজপুর অংশ থেকে। ফলে স্থানীয়দের মনে তৈরী হয়েছে ধুম্রজাল। আসলেই কি ওসমানীনগর থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে? না নবীগঞ্জ থেকে।
সীমনা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হলে এই বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তরা জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমে জানান, সীমানা নির্ধারণের কোন উদ্যোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। ড্রেজার মেশিন ও নৌকা আটকের খবর পেয়েছি। উপজেলা প্রশাসনে কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। ওসমানীনগর উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর অংশ থেকে বালু উত্তোলনে সরকারি কোন ইজারা নেই।
অনুসন্ধানে মিলে, ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠিান অবাণিজ্যিক ভাবে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা থাকলেও ওসমানীনগরে সেই বালু বিক্রি হচ্ছে বাণিজ্যিক ভাবে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নাম করে নদী থেকে ড্রেজার মেশিনে উত্তোলনকৃত বালু আনলোড হয় ওসমানীনগরে। আর সেই বালু অবৈধ পন্তায় বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করতে গড়ে উঠে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেট নিয়েন্ত্রন করছেন শেরপুর এলাকার লেংড়া এমরান নামের এক প্রভাবশালী। তার ছত্রছায়ায় একাধিক রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করে ট্রাকযুগে এসব বালু চলে যায় বিভিন্ন স্থানে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র রাস্তার কাছে ওই বালু ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও বাণিজ্যিক কোন নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ এন্ট্রারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ওয়াহিদ মিয়া। বাণিজ্যিক ভাবে বালু বিক্রির অভিযোগটি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি। তিনি জানান, এমরানের মাধ্যমে আমরা বালু ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানে পাঠাই। যদি বাণিজ্যিক ভাবে বালু বিক্রি হয় তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আটক নৌকা ও ড্রেজার মেশিনের বিষয়টি প্রশাসন দেখবেন। রবিবার প্রশাসন এই বিষয়ে জরিপ করে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে মিলে দুটি নৌকা ও একটি ড্রেজার মেশিন শেরপুর সেতুর নিচে রাখা। নৌকায় থাকা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নাম প্রকাশ না করলেও জানান বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।
শাহ মাহমদ ও শেখ জুমান কুরেশী নামে দুই ছাত্র গণমাধ্যমে জানান, কুশিয়ারা নদীর ওসমানীনগর অংশ থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙ্গন ও কুশিয়ারা ড্রাইকের উপর দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে বালু পরিবহনে ঝুঁকিতে রয়েছে কুশিয়ারা ড্রাইক। অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের ফলে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন হচ্ছে তীব্র, বিলিন হচ্ছে নদীর তীরবর্তী বাড়ি-ঘর। ওসমানীনগর অংশ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সময় তারা ড্রেজার মেশিন ও নৌকা আটক করে থানা ও সেনাবাহীনিকে অবগত করেছেন। বর্তমানে নৌকা ও ড্রেজার সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে রয়েছে।
তবে শেরপুরে গিয়ে এমরান আহমদের সাথে গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগের চেষ্টা করলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি সটকে যান।
Leave a Reply