তদন্ত রিপোর্ট ডেস্ক: একসময় প্রবাসে কেউ গেলে বা বিদেশ থেকে ফিরলে পুরো পরিবারের মানুষজন ছুটে যেতেন বিমানবন্দরে। বিদায় বা বরণ—দুই ক্ষেত্রেই থাকত উৎসবের আমেজ। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন প্রবাসীদের যাত্রা বা ফেরা—সবকিছুই নিঃশব্দে ঘটে। প্রিয়জনেরা থাকেন ব্যস্ততায়, অনেকে আবার নিরাপত্তার কারণে বিমানবন্দরে একা যাওয়া-আসা পছন্দ করেন। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে মলম পার্টি।
সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় এ চক্র আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একের পর এক প্রবাসী তাদের খপ্পরে পড়ছেন। প্রবাস থেকে দেশে ফেরার আনন্দের মুহূর্ত বদলে যাচ্ছে আতঙ্ক আর অসহায়তায়।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মালয়েশিয়া ফেরত প্রবাসী আব্দুল কাদের (৩২) নিখোঁজ হন বিমানবন্দর এলাকা থেকে। পরিবারের সদস্যরা জানান, ঢাকায় পৌঁছে তিনি ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। এরপরই ফোন বন্ধ। কোনো খোঁজ মেলেনি।
পরদিন বুধবার পরিবারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দর থানায় যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় জানাতে বলা হয়। কিন্তু চৌদ্দগ্রাম থানা আবার বিষয়টি ঢাকার বলে জানায়। দুই থানার দায়িত্ব এড়ানোর খেলায় পরিবারের দৌড়ঝাঁপ চলতেই থাকে।
অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে এক অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে পরিবারের কাছে। ওপাশ থেকে কাদের জানান, তিনি মলম পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন। জ্ঞান ফেরার পর বর্তমানে তিনি প্রবাসী কল্যাণ হেল্প ডেস্কের সহযোগিতায় হাজী ক্যাম্প এলাকার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে আছেন।
কাদেরের পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা এখন তাকে নিতে হাজী ক্যাম্পের পথে রয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো নয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, সম্প্রতি বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা প্রবাসীদের টার্গেট করে। তারা প্রবাসী শনাক্ত করতে বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে তথাকথিত ‘সহযোগী’ বা ‘হেল্পার’ সেজে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা প্রবাসীদের অজ্ঞান করে টাকা-পয়সা, পাসপোর্ট, এমনকি লাগেজও নিয়ে যায়।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার বলেন, প্রবাসী যাত্রা ও ফেরা—দুই ক্ষেত্রেই বিমানবন্দর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসীদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। অপরিচিত কারও সহায়তা না নেওয়া, সরকারি তথ্য ডেস্ক ব্যবহার করা এবং পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার ওপর জোর দেন তিনি।
Leave a Reply