বিশেষ প্রতিবেদন
সাংবাদিকতার কোনো রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই যে কেউ এখন নামমাত্র খরচে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে রাতারাতি সম্পাদক বনে যাচ্ছেন। মাত্র কয়েক হাজার টাকা বিনিয়োগ করে আকর্ষণীয় নামের ওয়েবসাইট তৈরি করে চলছে কার্ড ছাপিয়ে সাংবাদিক নিয়োগের রমরমা ব্যবসা।
এই সুযোগে অনেকেই সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়, ব্ল্যাকমেইলিং এবং বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা মূলধারার সাংবাদিকতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কীভাবে এবং কত খরচে খোলা যায় নিউজ পোর্টাল? অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একটি নিউজ পোর্টাল তৈরি করতে ১০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।ডোমেইন, হোস্টিং এবং একটি সাধারণ নিউজ পোর্টাল থিম ব্যবহার করে অল্প খরচেই একটি ওয়েবসাইট দাঁড় করানো সম্ভব।
এরপরই শুরু হয় সম্পাদক, রিপোর্টারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন। অনেক ক্ষেত্রে এসব ভুঁইফোড় পোর্টালের মালিকদের সাংবাদিকতার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা অভিজ্ঞতা থাকে না।মাছ ব্যবসায়ী, মুদি দোকানদার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষও রাতারাতি সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছেন।
সাংবাদিকতার কার্ড এখন সহজলভ্য পণ্য এসব নামসর্বস্ব নিউজ পোর্টালগুলো মূলত “সাংবাদিকতার কার্ড” বিক্রি করে থাকে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে যে কেউ এসব পোর্টালের রিপোর্টার বা এমনকি জেলা প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয়পত্র পেয়ে যান।
এই কার্ড ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকার ব্যবসায়ীরাও এসব ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ।
মূলধারার সাংবাদিকতায় নেতিবাচক প্রভাব অপসাংবাদিকতার এই বিস্তারের ফলে পেশাদার এবং সৎ সাংবাদিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকরা বলছেন, এই সুযোগে হলুদ সাংবাদিকতা, তথ্য সন্ত্রাস এবং গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এতে করে প্রকৃত সাংবাদিকদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং তারা নানা ধরনের প্রতিকূলতার শিকার হচ্ছেন।
সরকারি পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ সরকার অনলাইন গণমাধ্যমগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিবন্ধনহীন নিউজ পোর্টালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তবে চ্যালেঞ্জ হলো, প্রতিদিনই নতুন নতুন পোর্টাল তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা কঠিন। তথ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে অনলাইন নিউজ প্রকাশনা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকলেও, সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং জটিল হওয়ায় অনেকেই নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করাই যথেষ্ট নয়, কারা নিউজ পোর্টাল পরিচালনা করছে, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা আছে কিনা, তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। একইসাথে, এসব ভুঁইফোড় পোর্টালের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা গেলে গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।
Leave a Reply