আব্দুল্লাহ আল মোমিনে
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)–এর পাবনা জেলা অফিস কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অফিসে নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকেন না, নতুন সংযোগে অনিহা, বিল জটিলতা আর লাইনের ত্রুটিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহক। অফিসে যোগাযোগ করতে গেলে অনেক সময় দেখা যায়, কর্মকর্তারা ‘বাইরে’ বা ‘মিটিংয়ে’— এমন অজুহাতে এড়িয়ে যান সেবা প্রার্থীদের।
গ্রাহক ও স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ, বিটিসিএল অফিসে তথ্য নিতে গেলে কর্মকর্তারা তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ করেন। অনেক সময় বলা হয়— “এখন বিটিসিএলের চাহিদা নাই, তাই কাজও নাই।” তবে প্রশ্ন উঠেছে, চাহিদা না থাকলে এত অফিস, কর্মকর্তা, গাড়ি, বেতন–ভাতা ও বাজেট কেন?
ইন্টারনেট বা ল্যান্ডফোন বিকল হলে মেরামতে লাগে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। অভিযোগ করেও সমাধান পাওয়া যায় না। একজন ক্ষুব্ধ গ্রাহক বলেন—
“বিল ঠিকভাবে দিই, কিন্তু লাইন ঠিক হয় না। অভিযোগ দিলে বলে— ঢাকায় কথা বলেন। এভাবে জনগণের টাকায় অফিস চলে, সেবা মেলে না।”
বিটিসিএল প্রতি বছর কোটি টাকার বেশি সরকারি বরাদ্দ পায়— অফিস পরিচালনা, সরঞ্জাম ক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও বেতনের জন্য। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কাজের অগ্রগতি নেই। পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“বিটিসিএল এখনো পুরনো কপার লাইনেই আটকে আছে। বাজেটের বেশিরভাগ অংশ প্রশাসনিক খরচে ব্যয় হচ্ছে, সেবার মানোন্নয়নে নয়।”
অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, অফিসে উপস্থিতি মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধের অভাব ও তদবির নির্ভর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানটিকে আরও অচল করে তুলেছে।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন,
“উপরের নির্দেশ ছাড়া কোনো বড় কাজ হয় না। অনেকেই দায়িত্বহীন হয়ে পড়েছেন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিটিসিএলকে টিকিয়ে রাখতে চাইলে এখনই কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। তাদের পরামর্শ—
অফিসে বায়োমেট্রিক উপস্থিতি মনিটরিং বাধ্যতামূলক করা,
অনলাইন অভিযোগ ও বিল ব্যবস্থাপনা চালু করা,
এবং প্রযুক্তি আধুনিকীকরণে বাজেট পুনর্বিন্যাস করা।
জনগণের টাকায় পরিচালিত এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চিত্র হতাশাজনক। অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা ও প্রযুক্তিগত পশ্চাদপদতায় হারিয়ে যাচ্ছে আস্থা। সরকার যদি দ্রুত উদ্যোগ না নেয়, তাহলে বিটিসিএল কেবল কাগজে-কলমেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকবে।
Leave a Reply