নিজস্ব প্রতিবেদক: পাথরের ভাণ্ডার সিলেটে। দেশের পাথরের চাহিদার বড় যোগানদাতা সিলেটের কোয়ারিগুলো। কিন্তু পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডের জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞায় দীর্ঘদিন ধরে এসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। তবে ৫ আগস্টের পর স্থানীয় প্রভাবশালীরা মেতে ওঠেন কোয়ারি থেকে পাথর লুটে। ৫ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যেই কেবল জাফলং ও ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে বলে সেসময় জানিয়েছিল প্রশাসন।
সরকারের পতনের পর থেকেই জাফলংয়ের পাথর কোয়ারীতে ব্যাপক লুটপাট চলছে। দিনের বেলা থানা পুলিশ এসব বন্ধের নামে নাটক চালান আবার রাতে লুটতরাজদের সঙ্গে মিলে চলছে জাফলং ধ্বংসের মহা তান্ডব। এ পর্যন্ত জাফলং পাথর কোয়ারী থেকে প্রায় শত কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে প্রশাসনের সহযোগিতায়। পাথর লুট-পাটে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.বদরুল হুদা বাদী হয়ে পৃথক-পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে পাথর লুট-পাটকারী মামলার আসামীরা এখনো রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার জুড়ে পাথর লুট ও সীমান্তে চোরাচালান সহ এসব কর্মকান্ডের নেপথ্য হোতা হিসেবে দফায় দফায় উঠে আসে সিলেট জেলা বিএনপির নেতা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য বিএনপি নেতা মো.রফিকুল ইসলাম শাহপরানের নাম। ইতিমধ্যে তাদের বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে বহিষ্কারের আরও বেপরোয়া তারা।
এদিকে তাদের সহযোগী শ্রমিক লীগ ও ট্রাক শ্রমিক নেতা এবং ছাত্র-জনতার পৃথক তিনটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সবেদ উরফে সবেদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি লুটতোরাজ বাহিনী। এ বাহিনীর আজগর, আলাল ও জাহিদ শাহপরানের হয়ে সকাল থেকে ভোর পর্যন্ত জাফলং এলাকার প্রতিটি নৌকা, শ্যালো মেশিন, পাথর-বালুবাহি গাড়িসহ কোয়ারীর গর্ত থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা উত্তোলন করে আসছে।
অন্যদিকে, শাহপরান ও ছমেদ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বেই জাফলংয়ের বল্লাপুঞ্জি, মন্দির’র জুমপাড়,জিরোপয়েন্ট,বাবুল’র জুম এলাকা, বল্লাপুঞ্জি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর জাফলং সেতু সংলগ্ন পাথর কোয়ারী এলাকায় অবৈধভাবে দানবযন্ত্র ফেলুডার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পাথর উত্তোলনের চলছে মহোৎসব। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও প্রশাসন নির্বিকার বরং তাদের মামলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপিপন্থি কিছু আইনজীবী।
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক লোকজন জানান- পাথর খেকোদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের মোটা অংকের টাকা ভাগ-বাটোয়ারায় চলছে এমন কর্মকান্ড। থানা পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করছেন বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। মাঝে মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের লোক দেখানো টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করলেও অভিযানিক দল ঘটনাস্থল পৌঁছানোর আগেই আগাম খবর চলে যায় পাথর খেকো চক্রের কাছে। যে কারণে জাফলং জুড়ে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন কার্যক্রম চলমান।
Leave a Reply