নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, বালু ও পাথর লুটতরাজ বন্ধ না হলে পরিবেশ বিপর্যয় মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিবে। অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে সিলেটের নদ-নদীগুলো ধ্বংস হচ্ছে। সিলেটের নদ-নদী ধ্বংস মানে সারাদেশের পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির উপর বিরাট আঘাত।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকাল ৩টায় আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে সুরমা নদীর তীরে চাঁদনী ঘাটে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার-এর উদ্যোগে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, সারি, ধলাই সহ বিভিন্ন নদ-নদীতে চলমান বালু লুটতরাজ’ এর বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিবাদ জানাতেই এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন পরিবেশ কর্মীরা।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট এর আহবায়ক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন (ধরা) এর সংগঠক ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক। অনুষ্ঠানে ধারণা বক্তব্য দেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট এর সদস্য সচিব ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম।
আরও বক্তব্য দেনন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল, সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ এমদাদুল হক, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইমজা সিলেটের সভাপতি আশরাফুল কবির, অ্যাডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী দিপন, অ্যাডভোকেট সুদীপ্ত অর্জুন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষন ট্রাস্টের রেজাউল কিবরিয়া, মাহমুদুর রহমান ওয়েস, মো. ফকরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট অরূপ শ্যাম বাপ্পী, শামসুল আলম জাকারিয়া, জাকির আহমদ চোধুরী, আলমগীর আলম শাহান, অ্যাডভোকেট জাকিয়া জালাল, রোমেনা বেগম, শ্রুতি সিলেটের এর সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত, সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী শাকিলা ববি, ফটো সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী সাংবাদিক মামুন হোসেন, ব্যবসায়ী মওদুদ আহমদ, প্রমূখ।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট এর সদস্য সচিব ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম ধারণা বক্তব্যে সিলেটের নদ-নদীগুলোর সাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিলেটের নদ-নদীগুলো থেকে বালু ও পাথর লুটপাটের মহোৎসব চলছে। এসব বালু ও পাথরখেকোরা শুধু নদ-নদী থেকে নয়, বরং কৃষি জমি, টিলা, বসতবাড়ি খুঁড়ে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে। বিজ্ঞানসম্মত ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সরকার নির্ধারিত পাথর ও বালু মহাল থেকে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ আহরন না করে নির্বিচারে নদ-নদীগুলোর উপর ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। এখানে প্রশাসন নির্বিকার। আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সহকর্মীগণের অনেকেই অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে থাকা সত্বেও এসব লুটতরাজ বন্ধ হচ্ছে না। আগেও নদ-নদীগুলো ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের ক্ষেত্র ছিল। বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে। যা আমরা মেনে নিতে পারি না। ময়লা আবর্জনা ফেলে নদ-নদীগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। বিভিন্ন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য নদ-নদী হয়ে হাওর ও সাগরের তলদেশ ভরাট করছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সংগঠক ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশে সবচেয়ে অস্তিত্ব সংকটে রইয়েছে নদ-নদী। ১৯৯৭ সালের মার্চে ব্রাজিলের কুরিতিয়া শহরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হলেও বাংলাদেশের নদীগুলোর বর্তমান বাস্তবতা বলে দিচ্ছে এ দিবসের প্রাসঙ্গিকতা। যেদেশে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, সেই দেশেই আবার নদীগুলোকে দখল-দূষনের মাধ্যমে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা কেবল মানুষের সুস্থ-সুন্দর থাকার অধিকার নিয়ে কথা বলে যাচ্ছি, অথচ আমাদেরকে সুস্থ-সুন্দর রাখতে যে নদ-নদীগুলোর অপরিসীম ভূমিকা সেসব নদ-নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। যারা সেটা করছে তারা দেশের সাধারন নাগরিক নন, সবাই ক্ষমতাধর। এদেরকে সবাই চিনেন, জানেন। এরা সংখ্যায় খুবই কম। অথচ এদের কাছেই আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠরা অসহায়। নদ-নদীগুলো রক্ষার জন্য আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কেবল নেই আইন ও আন্তর্জাতিক ঘোষণার বাস্তবায়ন। নদ-নদীগুলো রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে দেশে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট এর আহবায়ক ডা: মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বলেন, ‘নির্বিচারে বালু উত্তোলন অপরাধ। এভাবে বালু উত্তোলনে নদীর প্রবাহ পরিবর্তিত হয়। নদীতীরবর্তী কৃষিজমি, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী ভাঙ্গনে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়। তাই চলমান সময়ে সিলেট জেলার নদ-নদীর অন্যতম সমস্যা এই বালু লুটতরাজ বন্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তড়িৎ পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট এর সদস্য সচিব ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম এর মাতা ছালেহা খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও মরহুমার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
Leave a Reply