সিলেটে ‘ভেস্তে যাচ্ছে’ চোরাচালান বন্ধে পদস্থকর্মকর্তাদের একাধিক সভা! | তদন্ত রিপোর্ট

রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
নাচোলে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২৫ উদযাপন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, পুলিশের উদাসীনতার অভিযোগ ভাঙ্গুড়ায় জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ সাঁথিয়ায় ভেলাবাইচ বাতিল নিয়ে উত্তেজনা: দুই গ্রামে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২৫ জ্ঞানমূলক কিছু কথা বললেন সাংবাদিক দোয়েল । মেন্দি পাড়া হাই স্কুল মাঠে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে উঠান বৈঠক, নেতৃত্বে অধ্যাপক কামাল হোসেন পুরোনো বিএনপি নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শিমুল বিশ্বাসকে ঘিরে নির্বাচনী আলোচনা“পাবনা সোসাইটি”-এর উদ্যোগে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির অঙ্গীকার পাবনা ফরিদপুর ও সাঁথিয়ার যৌথ অভিযানে ৪০ লাখ টাকার চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস পাবনা বিটিসিএল অফিসে অনিয়ম–অবহেলা চাহিদা নেই দাবি করলেও কোটি টাকার সরকারি ব্যয়; সেবায় ভোগান্তি, পুনর্গঠনের দাবি
সিলেটে ‘ভেস্তে যাচ্ছে’ চোরাচালান বন্ধে পদস্থকর্মকর্তাদের একাধিক সভা!

সিলেটে ‘ভেস্তে যাচ্ছে’ চোরাচালান বন্ধে পদস্থকর্মকর্তাদের একাধিক সভা!

☆ দিনে ডিআইজি-কমিশনার ও এসপি'র সভা ☆ রাতে ওসি-দারোগারা ও লাইনম্যান’র সভা
☆ দিনে ডিআইজি-কমিশনার ও এসপি'র সভা ☆ রাতে ওসি-দারোগারা ও লাইনম্যান’র সভা

Manual5 Ad Code

তদন্ত রিপোর্ট প্রতিবেদক: থেমে নেই চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য সিলেট সীমান্তে চোরাচালানের কারবার। চোরাচালান বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের পদস্থকর্মকর্তারা দফায়- দফায় সভায় বসছেন। তবুও চোরাকারবারিদের লাগান টানা যাচ্ছেনা।

সীমান্ত এলাকার চোরাচারালান বন্ধ করতে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি, সিলেট এসএমপি কমিশনার, চোরাচালান বিরোধী ট্রাক্সফোর্স ও চোরাচালান মনিটরিংসেল প্রতিমাসে শুধু করেই যাচ্ছেন একাধিক সভা। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছু। ঘুরেফিরে যেই লাউ সেই কদু অথাৎ ফলাফল শূন্য।

Manual6 Ad Code

অনুসন্ধানে জানা গেছে- পদস্থ কর্মকর্তা চোরাচালান বন্ধে তৎপর হলেও তাদের অধিনস্থ ওসি-দারোগারা জড়িয়ে আছেন চোরাচালানের সঙ্গে। সীমান্ত এলাকার সবকয়টি থানার ওসিরা দিনে ডিআইজি, কমিশনার ও এসপির সভায় অংশ নিলেও রাতে থানায় ঠিকই বসেন দারোগা ও চোরাচালানের লাইনম্যানদের নিয়ে। চোরাচালান মনিটরিংসেলে এসব সভা হলে ঘুষের রেইটও বৃদ্ধি পায় থানার ওসি-দারোগারাদের। যারফলে ‘ভেস্তে যাচ্ছে’ চোরাচালান বন্ধে পদস্থকর্মকর্তাদের এসব একাধিক সভা!

নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক চোরাকারবারি ও বিশস্ত সুত্রমতে- সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ৪টি থানার ওসি-দারোগারাসহ জেলা ডিবি পুলিশের উত্তর জোনের ওসি সরাসরি এসব চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। প্রতিটি বিটের দায়িত্বে থাকা দারোগার মধ্যস্থতায় চোরাচালানের ল্যাইনম্যান নিয়োগ করে সবকয়টি সীমান্ত হতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ প্রতিমাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা অবৈধ পন্থায় কামাই করছেন। তবে শুধু যে ওসি তা কিন্তু নয়। থানার সবকয়টি বিটের দায়িত্ব থাকা দারোগারারা চোরাকারবারিদের চোরাচালান বাণিজ্যে সহযোগীতার বিনিময়ে মাসে ৩/৪ লাখ টাকার বেশি কামাই করছেন।

চোরাচালান রাজ্য নামে চিহ্নিত জৈন্তাপুর থানা পুলিশের ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদারুজ্জামানও সাবেক ওসির দেখানোর পথে হাঁটছেন। লাইনম্যানদের মারফতে চোরাচালান থেকে প্রতিমাসে প্রায় ২৫ লাখ টাকা কামাই করছেন। এ থানায় সিলেটের শীর্ষ চোরাকাবারিদের বাড়ি ও চোরাচালানের সর্বোচ্চ ঘাঁটি হরিপুর ও দরবস্ত বাজার অবস্থিত। তবে থেমে নেই কানাইঘাট থানা পুলিশের ওসি আব্দুল আউয়ালও। তিনি একই কৌশলে লাইনম্যানদের মারফতে চোরাচালান থেকে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা কামাই করছেন। ফলস্বরূপ এ থানা এলাকার ভিতর দিয়েই এখন সীমান্তের চোরাইপন্য নিরাপদে সিলেট শহরে পৌঁছাচ্ছে। আবার এই তিনজনের চেয়ে তেমনটা পিছনেও নয় জকিগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না। তিনিও লাইনম্যানদের দিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা কামাই করছেন।

সিলেট জেলা ডিবি পুলিশের উত্তর জোনের ওসি আলী আশরাফ লাইনম্যান নাজিম উদ্দিন ও মান্নান মেম্বার মারফতে চোরাচালানের দরজা ওপেন করে প্রতিমাসে প্রায় ২৫ লাখ টাকা কামাই করছেন। তবে বেশ কৌশলী বিধায় প্রতিমাসে চাঁদা আদায়ে নিয়োগ করেন নতুন নতুন লাইনম্যানও। দৈনিক চোরাকারবারিদের কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করে নির্ধারিত লাইনম্যান। তারপর সপ্তাহে লাইনম্যান থেকে বিটের দায়িত্বে থাকা দারোগার হাত ধরে খুব সহজেই পৌঁছে যায় থানাগুলোর ওসিদের টেবিলে। পরে ওসি থেকে থানার সহকারী পুলিশ সুপারের টেবিলে পৌঁছালে মূলত তারহাত ধরেই জেলার পুলিশ সুপারসহ ডিআইজির টেবিলেও পৌঁছে যায় অনায়াসে। এ টাকার ভাগ থেকে বঞ্চিত নয় স্থানীয়ও পর্যায়ের সাংবাদিকরা। ওসিরা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে তথাকথিত সাংবাদিকদের বিকাশে প্রতি সপ্তাহে সম্মানি পাঠান।

Manual4 Ad Code

সিলেট জেলা পুলিশের পর এবার আসছি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে দিকে। চোরালান নিয়ে অনুসন্ধানে দফায় দফায় উঠে আসে মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ জোনের আওতাধীন শাহপরান থানা পুলিশের ওসি মনির হোসেনের নাম। তিনি আবার নানান গুণের অধিকারী হওয়াতে সর্বদা তাকে ঘিরেই চলছে সিলেটের মিডিয়াপাড়ায় আলোচনা ও সমালোচনা। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে চোরাকারবারিদের সহযোগিতার ঘটনায় ইতিপূর্বে জাতীয় দৈনিক সহ স্থানীয়ও একাধিক দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তবুও অদৃশ্য কোন কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশ কমিশনার। কিন্তু ওসি মনির নিরব থাকলেও সরব রয়েছেন শাহপরান মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনর্চাজ এসআই সানাউল ইসলাম। এসআই সানাউল যোগদানের পর তিনি অভিযান চালিয়ে ভারতীয় চিনিসহ চোরাকারবারিদের আটক করেন মর্মে মাঝেমধ্যে পত্র-পত্রিকায় খবর মিলে।

Manual2 Ad Code

শাহপরান থানা পুলিশের ওসি মনির হোসেনসহ দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান ও মোগলাবাজার থানা পুলিশের ওসি ফয়সাল আহমদ চোরাইমালের গাড়ি ছাড়ের বিনিময়ে চোরাকারবারিদের নিকট থেকে প্রতি সপ্তাহে বড় অংকের টাকা বখরা নিয়ে লাইন ক্লিয়ার দেন। বিগত সরকারে আমলে চোরাচালান ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ছিলো আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পট পরিবর্তনের পরে তা নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপি নামধারী কতিপয় বলয়ের যুবদল ও ছাত্রদলে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীরা।

গত বছরের (২৩ ডিসেম্বর) সোমবার সিলেট রেঞ্জের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উঠে আসে সীমান্তের চোরাচালানের বিষয়টি। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন- রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ মুশফেকুর রহমানসহ বিভিন্ন জেলার এসপিসহ পদস্থ কর্মকর্তারা। সভায় ডিআইজি পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অপরাধ-প্রতিরোধে নির্দেশনা দিয়ে চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের নির্দেশ প্রদান করেন।

অন্যদিকে, একই দিন এসএমপির পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে হয় তাদের ডিসেম্বর মাসের কল্যাণ সভা। উপস্তিত ছিলেন- দুই জোনের ডিসিরাসহ বিভিন্ন ইউনিটের পদস্থ কর্মকর্তারা। সেই সভায়ও উঠে আসে চোরাচালানের বিষয়টি। দেওয়া হয় কঠোর নির্দেশেনা। এর আগের (দিন ২২ ডিসেম্বর) ছিলো জেলা চোরাচালান মামলা মনিটরিং সেলেরও মাসিক সভা। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্তিত ছিলেন- জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, বিজির কর্মকর্তারা, কাস্টমসের বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ আরো অনেকে। তবুও বন্ধ হচ্ছে না সীমান্তের চোরাচালান।

সিলেট জেলা প্রশাসক শেরই মাহবুব মুরাদ গণমাধ্যমে বলেন- পট পরিবর্তনের পর প্রায় শত কোটি টাকার চোরাইপন্য পুলিশ ও বিজিবি আটক করেছে। মুলহুতাদের গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে জিরো টলারেন্সনীতি অবলম্বন করতে আমাদের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

Manual8 Ad Code

সিলেট বিজিবির ৪৮ ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন- চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করেছে এবং প্রচুর চোরাইপন্য আটক করেছে। এছাড়া মুলহুতাদের গ্রেফতার করতে গোয়েন্ধা তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তবে কোন থানার ওসিররা কেউই এসব প্রসঙ্গে কোন রকম বক্তব্য দিতে রাজি নন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code
error: Content is protected !!